
মুম্বাইয়ের সবচেয়ে বড় ধনীদের মধ্যে একজন স্যার দিনশা পেটিট সকালের জলখাবার খেতে বসেছিলেন। খাবার টেবিলে বসেই হাতে তুলে নিয়েছিলেন নিজের প্রিয় খবরের কাগজ ‘বম্বে ক্রনিক্যাল’। খবরের কাগজের আটের পাতায় পৌঁছে একটা খবরে চোখ যেতেই কাগজটা তাঁর হাত থেকে পড়ে গিয়েছিল। তারিখটা ছিল ২০ এপ্রিল ১৯১৮। সংবাদটা ছিল স্যার দিনশার কন্যা লেডি রতিকে আগের দিন সন্ধ্যায় বিয়ে করেছেন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। লেডি রতির পুরো নাম ছিল রতনবাই পেটিট।
ঘটনার শুরুটা হয়েছিল আরও বছর দুয়েক আগে। স্যার দিনশা নিজের বন্ধু আর ব্যারিস্টার মোহাম্মদ আলী জিন্নাহকে দার্জিলিংয়ে বেড়াতে আসার জন্য নিমন্ত্রণ করেছিলেন। সেখানে দিনশার ১৬ বছরের কন্যা লেডি রতিও ছিলেন। সেই সময়ের মুম্বাইয়ে মিস রতির সৌন্দর্য রীতিমতো চর্চার বিষয় ছিল। আর মি. জিন্নাহ তখন ভারতীয় রাজনীতির শিখরের খুব কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলেন। মি. জিন্নাহর বয়স তখন প্রায় ৪০। কিন্তু দার্জিলিংয়ের বরফে ঢাকা পাহাড় ছড়া আর নৈঃশব্দ্য এমনই জাদু দেখাল যে লেডি রতি ও মি. জিন্নাহ একে অন্যের প্রেমে পড়ে গেলেন। দার্জিলিং ভ্রমণের সময়েই মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ স্যার দিনশা পেটিটের কাছে প্রস্তাব দেন তার মেয়েকে বিয়ে করার। তবে এই প্রস্তাবে সাংঘাতিক উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলেন স্যার দিনশা। উত্তেজনা এতটাই ছিল যে অতিথিকে সেই মুহূর্তে নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন তিনি। মি. জিন্নাহ অনেক চেষ্ট করেও স্যার দিনশার মত বদলাতে পারেননি। দুই ধর্মের মধ্যে বিবাহবন্ধন হলে যে বন্ধুত্ব আর ঐক্য দৃঢ় হবে, স্যার দিনশার ওই তত্ত্ব প্রথম পরীক্ষাতেই ব্যর্থ হয়ে গেল। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর সঙ্গে কথা বলেননি স্যার দিনশা। আর মেয়ে লেডি রতির ওপরও নির্দেশ জারি হলো- যত দিন তিনি দিনশার বাড়িতে আছেন, তত দিন জিন্নাহর সঙ্গে কোনোভাবে দেখা করতে পারবেন না। সেখানেই শেষ নয়। কোর্ট থেকেও আদেশ বের করালেন স্যার দিনশা, যেন লেডি রতি প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত মি. জিন্নাহ যাতে তার মেয়ের সঙ্গে দেখা না করতে পারেন। এত কিছু করেও রতি আর জিন্নাহর লুকিয়ে দেখা করা বা একে অন্যকে চিঠি লেখা থামাতে পারেননি স্যার দিনশা পেটিট।

স্যার দিনশা অসম্ভব জেদি ছিলেন, কিন্তু অসমবয়সী এই প্রেমিক যুগলের জেদ যে আরও বেশি, সেটা দিনে দিনে বেশ বোঝা যেতে লাগল। তবে দুই পক্ষই কিছুটা মাথা ঠান্ডা রেখে চুপচাপ রতির ১৮ বছর বয়স পার হওয়া অবধি অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিল। ১৮ বছর হলে রতি বাসা থেকে পালিয়ে যান এবং রতিকে জামিয়া মসজিদে নিয়ে গেলেন জিন্নাহ। ইসলামে ধর্মান্তরিত করে পরের দিন ১৮ এপ্রিল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ আর লেডি রতির নিকাহ সম্পন্ন হলো। ১৮ বছরের ছোট একটি মেয়ের সঙ্গে জিন্নাহর বিয়ে সেই সময়ে ভারতীয় সমাজের এক নম্বর গসিপে পরিণত হয়েছিল।
রতির অপূর্ব সুন্দর শরীরে ঝলমল করত নীল বা গোলাপি রঙের পোশাক, কখনো তাতে থাকত সোনালি কারুকাজ। রুপা আর মার্বেল পাথরের তৈরি সিগারেট হোল্ডারে গোঁজা বিদেশি সিগারেটের ধোঁয়া যখন ছাড়তেন রতি, তখন তাঁর ব্যক্তিত্ব আলাদা মাত্রা পেত। তাঁর চলাফেরা, আদব-কায়দা তো চোখে পড়ার মতোই ছিল, কিন্তু চারপাশের মানুষের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় হয়ে উঠত তাঁর হাসি। যখন জিন্নাহ আর রতি মধুচন্দ্রিমা করতে লখনৌতে খাঁ সাহেবের বাবার প্রাসাদে গিয়েছিলেন, রতির পরনে ছিল সাদা শাড়ি, তাতে সোনালি আর কালো রঙের পাড়, যেন ঠিক একটা পরির মতো লাগছিল তাকে। জিন্নাহ আর রতি সে সময়ে দিল্লির মেন্ডেস হোটেলে ছিলেন।
মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর ব্যস্ততা আর স্ত্রীর সঙ্গে বয়সের ফারাক জিন্নাহ ও রতির মধ্যে ধীরে ধীরে কিছুটা দূরত্ব তৈরি করে দিল। তখন অল্পবয়সী স্ত্রী আর দুধের শিশুকন্যার জন্য দেওয়ার মতো সময় তাঁর হাতে বিশেষ ছিল না। দুজনের মধ্যে একটা হালকা দূরত্ব তৈরি হওয়ার কারণটা ছিল রাজনৈতিক। ১৯২৬ সাল নাগাদ ভারতের রাজনীতিতে জিন্নাহর যে অবস্থান ছিল, সেটা ১৯১৬ সালে তাঁদের বিয়ের সময়ের চেয়ে অনেক উঁচুতে। আর এই কতগুলো বছরে মি. জিন্নাহ সাম্প্রদায়িক রাজনীতি শুরু করেছেন। অন্যদিকে লেডি রতিও মাঝেমধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়তেন। একবার অসুস্থতার পর ফ্রান্স থেকে এম এস রাজপুতানা নামের জাহাজে চেপে দেশে ফেরার সময় স্বামীকে একটা চিঠি লিখেছিলেন রতি। ‘আমার জন্য তুমি যা করেছ, তার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আমি তোমাকে যতটা চেয়েছিলাম, আর কোনো পুরুষমানুষকেই কোনো নারী বোধ হয় অতটা চায়নি কখনো। তুমি আমাকে ওই ফুলটার মতো করেই মনে রেখো, যেটা ছিঁড়ে এনেছিলে। যে ফুলটাকে তুমি পা দিয়ে মাড়িয়ে দিয়েছ, সেটাকে মনে রাখার দরকার নেই।’ লিখেছিলেন রতি জিন্নাহ।
১৯২৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি মাত্র ২৯ বছর বয়সে রতি জিন্নাহ মারা যান। শেষ সময়টায় তাঁর সঙ্গী ছিলেন কাঞ্জি দ্বারকা দাস। কাঞ্জিই জানিয়েছিলেন, শেষ দিনগুলোয় রতি খুব মনমরা হয়ে থাকতেন। একবার কাঞ্জি রতিকে বলেছিলেন তাঁর আসতে একটু দেরি হবে। শুকনো মুখে রতি জবাব দিয়েছিলেন, ‘ততক্ষণ অবধি যদি বেঁচে থাকি।’ পরে কাঞ্জিই এক পাকিস্তানি সাংবাদিককে বলেছিলেন, অনেকগুলো ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন রতি। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ সেদিন দিল্লিতে ওয়েস্টার্ন কোর্ট ভবনে ছিলেন। তখনই একটা ট্রাঙ্ক কল আসে তাঁর কাছে। ফোনের অপর প্রান্তে ছিলেন শ্বশুর দিনশা পেটিট। দশ বছরের মধ্যে সেই প্রথমবার দুজনের কথা হয়। মেয়ে যে খুব অসুস্থ, সেই খবরটা জিন্নাহকে জানিয়েছিলেন মি. দিনশা। সঙ্গে সঙ্গেই তিনি ট্রেনে করে মুম্বাইয়ের দিকে রওনা হন। পথেই ভাইসরয় আর অন্য মান্যগণ্যদের টেলিগ্রাম আসতে থাকে, শোক জ্ঞাপন করা টেলিগ্রাম। জিন্নাহ বুঝতে পারেন যে রতি আর এই পৃথিবীতে নেই। স্টেশন থেকে সোজা কবরস্থানে গিয়েছিলেন জিন্নাহ। সেখানে তাঁর জন্যই সবাই অপেক্ষা করছিল।
সবচেয়ে কাছের আত্মীয় হিসেবে যখন জিন্নাহকে অনুরোধ করা হয়েছিল কবরে মাটি দিতে, তখন ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠেছিলেন জিন্নাহ। সেই প্রথম, আর সেই শেষবার মোহাম্মদ আলী জিন্নাহকে জনসমক্ষে নিজের মনের ভাব প্রকাশ করতে দেখা গিয়েছিল।
লেখক : ভাষাসৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, একুশে পদকপ্রাপ্ত ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদকপ্রাপ্ত। রাজনৈতিক চিন্তাবিদ ও কলামিস্ট।
ঘটনার শুরুটা হয়েছিল আরও বছর দুয়েক আগে। স্যার দিনশা নিজের বন্ধু আর ব্যারিস্টার মোহাম্মদ আলী জিন্নাহকে দার্জিলিংয়ে বেড়াতে আসার জন্য নিমন্ত্রণ করেছিলেন। সেখানে দিনশার ১৬ বছরের কন্যা লেডি রতিও ছিলেন। সেই সময়ের মুম্বাইয়ে মিস রতির সৌন্দর্য রীতিমতো চর্চার বিষয় ছিল। আর মি. জিন্নাহ তখন ভারতীয় রাজনীতির শিখরের খুব কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলেন। মি. জিন্নাহর বয়স তখন প্রায় ৪০। কিন্তু দার্জিলিংয়ের বরফে ঢাকা পাহাড় ছড়া আর নৈঃশব্দ্য এমনই জাদু দেখাল যে লেডি রতি ও মি. জিন্নাহ একে অন্যের প্রেমে পড়ে গেলেন। দার্জিলিং ভ্রমণের সময়েই মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ স্যার দিনশা পেটিটের কাছে প্রস্তাব দেন তার মেয়েকে বিয়ে করার। তবে এই প্রস্তাবে সাংঘাতিক উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলেন স্যার দিনশা। উত্তেজনা এতটাই ছিল যে অতিথিকে সেই মুহূর্তে নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন তিনি। মি. জিন্নাহ অনেক চেষ্ট করেও স্যার দিনশার মত বদলাতে পারেননি। দুই ধর্মের মধ্যে বিবাহবন্ধন হলে যে বন্ধুত্ব আর ঐক্য দৃঢ় হবে, স্যার দিনশার ওই তত্ত্ব প্রথম পরীক্ষাতেই ব্যর্থ হয়ে গেল। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর সঙ্গে কথা বলেননি স্যার দিনশা। আর মেয়ে লেডি রতির ওপরও নির্দেশ জারি হলো- যত দিন তিনি দিনশার বাড়িতে আছেন, তত দিন জিন্নাহর সঙ্গে কোনোভাবে দেখা করতে পারবেন না। সেখানেই শেষ নয়। কোর্ট থেকেও আদেশ বের করালেন স্যার দিনশা, যেন লেডি রতি প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত মি. জিন্নাহ যাতে তার মেয়ের সঙ্গে দেখা না করতে পারেন। এত কিছু করেও রতি আর জিন্নাহর লুকিয়ে দেখা করা বা একে অন্যকে চিঠি লেখা থামাতে পারেননি স্যার দিনশা পেটিট।

স্যার দিনশা অসম্ভব জেদি ছিলেন, কিন্তু অসমবয়সী এই প্রেমিক যুগলের জেদ যে আরও বেশি, সেটা দিনে দিনে বেশ বোঝা যেতে লাগল। তবে দুই পক্ষই কিছুটা মাথা ঠান্ডা রেখে চুপচাপ রতির ১৮ বছর বয়স পার হওয়া অবধি অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিল। ১৮ বছর হলে রতি বাসা থেকে পালিয়ে যান এবং রতিকে জামিয়া মসজিদে নিয়ে গেলেন জিন্নাহ। ইসলামে ধর্মান্তরিত করে পরের দিন ১৮ এপ্রিল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ আর লেডি রতির নিকাহ সম্পন্ন হলো। ১৮ বছরের ছোট একটি মেয়ের সঙ্গে জিন্নাহর বিয়ে সেই সময়ে ভারতীয় সমাজের এক নম্বর গসিপে পরিণত হয়েছিল।
রতির অপূর্ব সুন্দর শরীরে ঝলমল করত নীল বা গোলাপি রঙের পোশাক, কখনো তাতে থাকত সোনালি কারুকাজ। রুপা আর মার্বেল পাথরের তৈরি সিগারেট হোল্ডারে গোঁজা বিদেশি সিগারেটের ধোঁয়া যখন ছাড়তেন রতি, তখন তাঁর ব্যক্তিত্ব আলাদা মাত্রা পেত। তাঁর চলাফেরা, আদব-কায়দা তো চোখে পড়ার মতোই ছিল, কিন্তু চারপাশের মানুষের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় হয়ে উঠত তাঁর হাসি। যখন জিন্নাহ আর রতি মধুচন্দ্রিমা করতে লখনৌতে খাঁ সাহেবের বাবার প্রাসাদে গিয়েছিলেন, রতির পরনে ছিল সাদা শাড়ি, তাতে সোনালি আর কালো রঙের পাড়, যেন ঠিক একটা পরির মতো লাগছিল তাকে। জিন্নাহ আর রতি সে সময়ে দিল্লির মেন্ডেস হোটেলে ছিলেন।
মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর ব্যস্ততা আর স্ত্রীর সঙ্গে বয়সের ফারাক জিন্নাহ ও রতির মধ্যে ধীরে ধীরে কিছুটা দূরত্ব তৈরি করে দিল। তখন অল্পবয়সী স্ত্রী আর দুধের শিশুকন্যার জন্য দেওয়ার মতো সময় তাঁর হাতে বিশেষ ছিল না। দুজনের মধ্যে একটা হালকা দূরত্ব তৈরি হওয়ার কারণটা ছিল রাজনৈতিক। ১৯২৬ সাল নাগাদ ভারতের রাজনীতিতে জিন্নাহর যে অবস্থান ছিল, সেটা ১৯১৬ সালে তাঁদের বিয়ের সময়ের চেয়ে অনেক উঁচুতে। আর এই কতগুলো বছরে মি. জিন্নাহ সাম্প্রদায়িক রাজনীতি শুরু করেছেন। অন্যদিকে লেডি রতিও মাঝেমধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়তেন। একবার অসুস্থতার পর ফ্রান্স থেকে এম এস রাজপুতানা নামের জাহাজে চেপে দেশে ফেরার সময় স্বামীকে একটা চিঠি লিখেছিলেন রতি। ‘আমার জন্য তুমি যা করেছ, তার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আমি তোমাকে যতটা চেয়েছিলাম, আর কোনো পুরুষমানুষকেই কোনো নারী বোধ হয় অতটা চায়নি কখনো। তুমি আমাকে ওই ফুলটার মতো করেই মনে রেখো, যেটা ছিঁড়ে এনেছিলে। যে ফুলটাকে তুমি পা দিয়ে মাড়িয়ে দিয়েছ, সেটাকে মনে রাখার দরকার নেই।’ লিখেছিলেন রতি জিন্নাহ।
১৯২৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি মাত্র ২৯ বছর বয়সে রতি জিন্নাহ মারা যান। শেষ সময়টায় তাঁর সঙ্গী ছিলেন কাঞ্জি দ্বারকা দাস। কাঞ্জিই জানিয়েছিলেন, শেষ দিনগুলোয় রতি খুব মনমরা হয়ে থাকতেন। একবার কাঞ্জি রতিকে বলেছিলেন তাঁর আসতে একটু দেরি হবে। শুকনো মুখে রতি জবাব দিয়েছিলেন, ‘ততক্ষণ অবধি যদি বেঁচে থাকি।’ পরে কাঞ্জিই এক পাকিস্তানি সাংবাদিককে বলেছিলেন, অনেকগুলো ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন রতি। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ সেদিন দিল্লিতে ওয়েস্টার্ন কোর্ট ভবনে ছিলেন। তখনই একটা ট্রাঙ্ক কল আসে তাঁর কাছে। ফোনের অপর প্রান্তে ছিলেন শ্বশুর দিনশা পেটিট। দশ বছরের মধ্যে সেই প্রথমবার দুজনের কথা হয়। মেয়ে যে খুব অসুস্থ, সেই খবরটা জিন্নাহকে জানিয়েছিলেন মি. দিনশা। সঙ্গে সঙ্গেই তিনি ট্রেনে করে মুম্বাইয়ের দিকে রওনা হন। পথেই ভাইসরয় আর অন্য মান্যগণ্যদের টেলিগ্রাম আসতে থাকে, শোক জ্ঞাপন করা টেলিগ্রাম। জিন্নাহ বুঝতে পারেন যে রতি আর এই পৃথিবীতে নেই। স্টেশন থেকে সোজা কবরস্থানে গিয়েছিলেন জিন্নাহ। সেখানে তাঁর জন্যই সবাই অপেক্ষা করছিল।
সবচেয়ে কাছের আত্মীয় হিসেবে যখন জিন্নাহকে অনুরোধ করা হয়েছিল কবরে মাটি দিতে, তখন ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠেছিলেন জিন্নাহ। সেই প্রথম, আর সেই শেষবার মোহাম্মদ আলী জিন্নাহকে জনসমক্ষে নিজের মনের ভাব প্রকাশ করতে দেখা গিয়েছিল।
লেখক : ভাষাসৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, একুশে পদকপ্রাপ্ত ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদকপ্রাপ্ত। রাজনৈতিক চিন্তাবিদ ও কলামিস্ট।