
একটি দেশের শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির ওপর নির্ভর করে সে দেশের ঐতিহ্য ও পরিচয়। যে দেশ শিল্প-সাহিত্যে যত উন্নত, সেই দেশের মানবিক চরিত্রও তত উন্নত হয়। মানবিক চরিত্র বলতে বোঝায়, সেই দেশের সভ্যতা।
বাংলাদেশ নামক ছোট্ট দেশটির রয়েছে হাজার বছরের ঐতিহ্য। ব্রিটিশসহ নানান দেশের লুটেরা আমাদের দেশের সম্পদ চুরি-ডাকাতি করে নিয়ে গেছে, তারা কিন্তু আমাদের শিল্প-সাহিত্য চুরি করে নিয়ে যেতে পারেনি।
তবে চেষ্টার কোনো ত্রুটি ছিল না। মসলিন কাপড়ের কারিগরদের হাতের আঙুল কেটে নেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। তবে আমাদের বাঙালি সংস্কৃতির ওপর মোটেও প্রভাব খাটাতে পারেনি। সাময়িক পাশ্চাত্য সভ্যতা উঁকিঝুঁকি দিলেও শিকড়ে প্রবেশ করতে পারেনি। তবে হতাশার বিষয় হলো বিপুলসংখ্যক তরুণ প্রজন্ম বিভ্রান্ত হচ্ছে সাময়িক লোভের বশবর্তী হয়ে। রাতারাতি হিরো হওয়ার উন্মত্ত নেশায় হুমকির সম্মুখীন দেশীয় সংস্কৃতি।
বারো মাসের তেরো পার্বণের দেশ বাংলাদেশ। গাজির কিস্সা, পালাগান, যাত্রাপালা, নৌকাবাইচ, পহেলা বৈশাখসহ বিভিন্ন লোকজ সংস্কৃতি এখন হুমকির মুখে।
প্রথমত পাশ্চাত্য ধ্যান-ধারণা, দ্বিতীয়ত ধর্মান্ধতা। এসবের সম্মিলিত ছোবলে দেশীয় সংস্কৃতি অনেকটা বিলুপ্তির পথে। অশিক্ষাও এখানে একটি বড় বাধা।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে দেখা গেছে, পুঁথিবিদ্যার শিক্ষিত লোকজনও সংস্কৃতি ও ধর্মের পার্থক্যকে গুলিয়ে ফেলছেন। আমাদের আবহমান বাংলার লোকজ সংস্কৃতিকে ধর্মের বেড়াজালে আবদ্ধ করে বিতর্কিত করছেন। পেশিশক্তির কাছে অসহায় হয়ে পড়ছেন এসব প্রান্তিক জনগণ।
প্রথমেই বলেছি, পাশ্চাত্য দামামা আমাদের মেধাশক্তিকে শাণিত করার বিপরীতে দুর্বলও করে দিচ্ছে। তাই নতুন কোনো শিল্পের মেধা বেরিয়ে আসছে না। সত্তর, আশি ও নব্বই দশকের তুমুল জনপ্রিয় গান, বাংলা চলচ্চিত্রগুলোই আমাদের এখনো অনুপ্রাণিত করে। বর্তমানে কারিগরি দক্ষতা, টেকনোলজির নাটকীয় উন্নতি হলেও নাটক-সিনেমার গল্প, গানের সুর, কথার তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। এখনো আমরা রিমিক্স করছি। কারণ সেই সব সময়ের বিষয়বস্তুগুলো আমাদের হৃদয়ে স্থায়ীভাবে আসন করে নিতে পেরেছিল। আমাদের তরুণ প্রজন্ম বড্ড অস্থিরতায় ভুগছে। ভালো কিছুর জন্য সময় দিতে চাচ্ছে না। রাতারাতি ভাইরাল হতে চাচ্ছে। কিছু ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে, তবে ব্যতিক্রম উদাহরণ হতে পারে না। বাংলা ভাষায় আমরা কথা বলি, লিখি। এটি আমাদের মায়ের ভাষা; প্রাণের ভাষা। কিন্তু শুদ্ধভাবে বাংলার প্রচলন এবং প্রয়োগে আমরা এখনো পিছিয়ে আছি। কারণ আমরা পড়ি কম। অন্য দেশের শিল্প-সংস্কৃতি সম্বন্ধে আমাদের ধারণা কম থাকায় পার্থক্যটা বুঝতে দেরি হয়। প্রবাসের ছেলেমেয়েদের বাংলা ভাষা, বাঙালি সংস্কৃতির বিষয়ে আগ্রহ তৈরি হচ্ছে, তবে তাদের লালন করতে, ধারাবাহিকতা রক্ষায় আরও বেশি মনোযোগী হতে হবে। আমাদের অভিভাবকদের আরও একটু বেশি সময় দিতে হবে।
আধুনিক প্রযুক্তির বদৌলতে আমাদের পুরোনো দিনের সৃষ্টিগুলো সামনে চলে আসছে। এখনকার সময়ে এসে এখনো আরও তীব্র আকারে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। এটা কি আমাদের বর্তমান প্রজন্মের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ বা লজ্জার বিষয় নয়? তা না হলে আশির দশকের একটি সিনেমার সংলাপ ‘চাচা, হেনা কোথায়? বাড়িঘর এত সাজানো কেন?’ ভাইরাল হবে কেন তথ্যপ্রযুক্তির এই উন্নত সময়ে।
লেখক : সম্পাদক, ইউএস বাংলা নিউজ, নিউইয়র্ক
বাংলাদেশ নামক ছোট্ট দেশটির রয়েছে হাজার বছরের ঐতিহ্য। ব্রিটিশসহ নানান দেশের লুটেরা আমাদের দেশের সম্পদ চুরি-ডাকাতি করে নিয়ে গেছে, তারা কিন্তু আমাদের শিল্প-সাহিত্য চুরি করে নিয়ে যেতে পারেনি।
তবে চেষ্টার কোনো ত্রুটি ছিল না। মসলিন কাপড়ের কারিগরদের হাতের আঙুল কেটে নেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। তবে আমাদের বাঙালি সংস্কৃতির ওপর মোটেও প্রভাব খাটাতে পারেনি। সাময়িক পাশ্চাত্য সভ্যতা উঁকিঝুঁকি দিলেও শিকড়ে প্রবেশ করতে পারেনি। তবে হতাশার বিষয় হলো বিপুলসংখ্যক তরুণ প্রজন্ম বিভ্রান্ত হচ্ছে সাময়িক লোভের বশবর্তী হয়ে। রাতারাতি হিরো হওয়ার উন্মত্ত নেশায় হুমকির সম্মুখীন দেশীয় সংস্কৃতি।
বারো মাসের তেরো পার্বণের দেশ বাংলাদেশ। গাজির কিস্সা, পালাগান, যাত্রাপালা, নৌকাবাইচ, পহেলা বৈশাখসহ বিভিন্ন লোকজ সংস্কৃতি এখন হুমকির মুখে।
প্রথমত পাশ্চাত্য ধ্যান-ধারণা, দ্বিতীয়ত ধর্মান্ধতা। এসবের সম্মিলিত ছোবলে দেশীয় সংস্কৃতি অনেকটা বিলুপ্তির পথে। অশিক্ষাও এখানে একটি বড় বাধা।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে দেখা গেছে, পুঁথিবিদ্যার শিক্ষিত লোকজনও সংস্কৃতি ও ধর্মের পার্থক্যকে গুলিয়ে ফেলছেন। আমাদের আবহমান বাংলার লোকজ সংস্কৃতিকে ধর্মের বেড়াজালে আবদ্ধ করে বিতর্কিত করছেন। পেশিশক্তির কাছে অসহায় হয়ে পড়ছেন এসব প্রান্তিক জনগণ।
প্রথমেই বলেছি, পাশ্চাত্য দামামা আমাদের মেধাশক্তিকে শাণিত করার বিপরীতে দুর্বলও করে দিচ্ছে। তাই নতুন কোনো শিল্পের মেধা বেরিয়ে আসছে না। সত্তর, আশি ও নব্বই দশকের তুমুল জনপ্রিয় গান, বাংলা চলচ্চিত্রগুলোই আমাদের এখনো অনুপ্রাণিত করে। বর্তমানে কারিগরি দক্ষতা, টেকনোলজির নাটকীয় উন্নতি হলেও নাটক-সিনেমার গল্প, গানের সুর, কথার তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। এখনো আমরা রিমিক্স করছি। কারণ সেই সব সময়ের বিষয়বস্তুগুলো আমাদের হৃদয়ে স্থায়ীভাবে আসন করে নিতে পেরেছিল। আমাদের তরুণ প্রজন্ম বড্ড অস্থিরতায় ভুগছে। ভালো কিছুর জন্য সময় দিতে চাচ্ছে না। রাতারাতি ভাইরাল হতে চাচ্ছে। কিছু ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে, তবে ব্যতিক্রম উদাহরণ হতে পারে না। বাংলা ভাষায় আমরা কথা বলি, লিখি। এটি আমাদের মায়ের ভাষা; প্রাণের ভাষা। কিন্তু শুদ্ধভাবে বাংলার প্রচলন এবং প্রয়োগে আমরা এখনো পিছিয়ে আছি। কারণ আমরা পড়ি কম। অন্য দেশের শিল্প-সংস্কৃতি সম্বন্ধে আমাদের ধারণা কম থাকায় পার্থক্যটা বুঝতে দেরি হয়। প্রবাসের ছেলেমেয়েদের বাংলা ভাষা, বাঙালি সংস্কৃতির বিষয়ে আগ্রহ তৈরি হচ্ছে, তবে তাদের লালন করতে, ধারাবাহিকতা রক্ষায় আরও বেশি মনোযোগী হতে হবে। আমাদের অভিভাবকদের আরও একটু বেশি সময় দিতে হবে।
আধুনিক প্রযুক্তির বদৌলতে আমাদের পুরোনো দিনের সৃষ্টিগুলো সামনে চলে আসছে। এখনকার সময়ে এসে এখনো আরও তীব্র আকারে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। এটা কি আমাদের বর্তমান প্রজন্মের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ বা লজ্জার বিষয় নয়? তা না হলে আশির দশকের একটি সিনেমার সংলাপ ‘চাচা, হেনা কোথায়? বাড়িঘর এত সাজানো কেন?’ ভাইরাল হবে কেন তথ্যপ্রযুক্তির এই উন্নত সময়ে।
লেখক : সম্পাদক, ইউএস বাংলা নিউজ, নিউইয়র্ক