Thikana News
১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

এআর রহমানকে ক্ষমা করে দেয়া যায় না?

এআর রহমানকে ক্ষমা করে দেয়া যায় না?


কবি কাজী নজরুলের বিখ্যাত বিদ্রোহী গীত-কাব্য ‘কারার ওই লৌহ কপাট’ মিউজিক কম্পোজ করে ফেঁসেই গেলেন এআর রহমান। গানটার বারোটা বাজিয়ে দেয়ায় তার পিণ্ডি উদ্ধার চলছে সমানে। কেউ নেই তার পক্ষে। তবে, কিন্তু, যদি যোগ করেও কেউ তার পক্ষে সাফাই গাইছেন না। সুর যেমন-তেমন, গানটা ভালো হয়েছে- অন্তত এভাবেও কি তার পক্ষে একটু-আধটু বলা যায় না? তার পক্ষে কিছু বলা খুব রিস্কি? 
এমন রিস্কের মাঝেই বহুদিন অশোনা গানটি যে তার উছিলায় আবার বেজেছে, শোনা হয়েছে- এ প্রশ্নে একটা ধন্যবাদ দিতে চাই এআর রহমানকে। স্কেল নিচে ফেলে হয়তো তিনি এক্সপেরিমেন্ট চালিয়েছেন। আমাদের হিরো আলম রবীন্দ্রসঙ্গীত গাওয়ায় তাকে ডেকে পাঠিয়ে শাসিয়েছে পুলিশ। এই জনমে আর রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইবে না বলে মুচলেকা নেয়া হয়েছে তার। সেই খবর আমরা জানি। সেই দৃষ্টে এখন এআর রহমানকেও কি ডেকে নিয়ে প্যাঁদানি দিতে হবে? 
নাহ, সেটার দরকার করে না। মানাবেও না। কারো কারো মতে, ভাষা না জেনে-বুঝে সুর করলে এমনই হয়। তাই গানটির  কথার অ্যাপিল ও অর্থ দু’টাই নাই হয়ে গেছে। বিশ্রী, রুচিহীন সুরে গানটির সৌন্দর্য্যই বরবাদ করে দিয়েছেন তিনি। কাজটি ফরমায়েসি বলেও মত আছে কারো কারো। যে গান শুনে শরীরের রক্ত নেচে ওঠে, গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যেতো, সেটিকে বিলাপের ধাঁচে ভাটিয়ালি-ভাওয়াইয়া করে ফেলায় মনোকষ্ট হওয়াও স্বাভাবিক। কোনো গান ভিন্ন সুরে, ভিন্ন ভাষায় গাওয়া যেতেই পারে। ভিন্ন সুরেও গানের বার্তাগুলো হৃদয়ে গাঁথা যায়। কিন্তু, সেই জায়গাও রাখা হয়নি। যা রহমান সাহেবকে সুপার ফ্লপ করে ছেড়েছে। এর চেয়ে বড় শাস্তি আর কী হতে পারে?
সত্তর-আশির দশকে এ দেশ আর পশ্চিম বাংলার পাড়ায়-পাড়ায়, স্কুল-কলেজে গণসঙ্গীতের আসর বসতো। তখনকার রাজনীতির প্রধান অনুসঙ্গ হিসেবে সেখানে গাওয়া হতো দেশাত্মবোধক গানগুলো। গত বছর কয়েকে বিএনপি-আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন গণসঙ্গীতের পাঠ চুকিয়ে দিয়েছে। ‘বাম’ ছাত্র সংগঠনগুলোও গণসঙ্গীত নিয়ে আর মাথা ঘামায় না। ‘ছাত্র শিবির’ তাদের রাজনীতির ধারার নিজস্ব গণসঙ্গীত বানিয়ে নানা সুরে প্রচার করে। ঐতিহাসিক উপাদানে পরিণত গান সারা পৃথিবীতেই মূল কাঠামো ঠিক রেখে ইম্প্রোভাইজ করা হয়। অমিতাভ বচ্চন যেমন রবীন্দ্রনাথের ‘একলা চলো রে’ গেয়েছেন। সলিল চৌধুরীও রবীন্দ্রনাথের এই গানের সুর ইম্প্রোভাইজ করে ‘বিচারপতি তোমার বিচার করবে যারা’ নির্মাণ করেছেন। এটি পৃথক ও স্বতন্ত্র গান হিসেবেই জনপ্রিয়। হেমন্ত মুখার্জি, এসডি বর্মন এবং আরডি বর্মন মুভির প্রয়োজনে রবীন্দ্রানাথের সুর ইম্প্রোভাইজ করে মৌলিক লিরিক্সে গান কম্পোজ করেছেন, রবীন্দ্রসঙ্গীতকে নিজেদের মতো খোল-নলচে বদলে হিন্দি মুভির ঢংয়ে রূপান্তর করেছেন কখনো?
নক্ষত্রেরও পতন হয়। নানা কারণে গত ১০/১২ বছরে তেমন হিট কোন ফিল্ম মিউজিক কম্পোজ নেই এআর রহমানের। ২০১১ সালের রকস্টার ছিল তার সর্বশেষ ব্লকবাস্টার। অথচ ১৯৯২ থেকে ২০১০, এআর রহমান মানেই মিউজিকে ঈশ্বরের নিজস্ব ছোঁয়া। রোজা, দিল সে, বোম্বে, রঙ্গিলা, তাল, পুকার, সাথিয়া, রং দে বাসন্তি, গুজারিশÑ প্রতিটি ফিল্মের মিউজিক ছিল অনন্য। মেলোডি, মিউজিক্যাল এরেঞ্জম্যান্ট, টিউন, কণ্ঠশিল্পী সিলেকশন সবক্ষেত্রেই ছিল স্বর্গীয় ছোঁয়া। কারো কারো বিশ্লেষণে, বলিউড মাফিয়াতন্ত্র, নেপোটিজম আর মিউজিক নিয়ে মাত্রারিক্ত এক্সপেরিমেন্ট তার জন্য কাল হয়েছে। এখন কার বুদ্ধিতে ‘কারার ওই লৌহ কপাট’ নিয়ে টান দিলেন তিনি? 
যার বুদ্ধিতেই করেন, নজরুলের গান নিয়ে তা করায় ভারি অন্যায় করে ফেলেননি এআর রহমান। তিনি উচ্চমার্গের গুণী কম্পোজার। গায়কও। ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ গানটি তিনি একাত্তরের ঘটনা নিয়ে নির্মিত মুভির জন্য করেছেন। তার উচিৎ ছিল তখনকার সুরের কঙ্কাল ঠিক রেখে ইম্প্রোভাইজ করা, যা তিনি ‘বন্দে মাতরমে’ করেছিলেন। নজরুলের গানটিতে বিদ্রোহ ভাবকে খারিজ না করলেই পারতেন। যা হয়ে গেছে অনেকটা সুপারম্যানের প্যান্টের ওপর আন্ডারওয়্যারের মতো! রণসঙ্গীতকে ‘নৌকা বাইচ’ সঙ্গীত বানিয়ে ফেলেছেন মনে করা হয়। নতুন জেনারেশনের অনেকে রণসঙ্গীত শোনেনি। শোনেওনি। ভবিষ্যতে শুনবে কিনা- এ সন্দেহের মাঝে এআর রহমান ‘কারার ওই লৌহ কপাট’কে সামনে এনেছেন। এর বিহিত না খুঁজে অন্তত গানটা ফিরিয়ে আনায় কি তাকে ক্ষমা করে দেয়া যায় না?
লেখক : সাংবাদিক-কলামিস্ট; ডেপুটি হেড অব নিউজ, বাংলাভিশন, ঢাকা। 
 

কমেন্ট বক্স