নির্বাচনী প্রচারণায় অনিয়মের অভিযোগে নিউইয়র্ক সিটির মেয়র এরিক অ্যাডামসের বিরুদ্ধে তদন্ত পরিচালিত হচ্ছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের সঙ্গে যুক্ত সূত্র থেকে আর্থিক সহায়তা নেওয়ার অভিযোগ তদন্তে মেয়র এরিক অ্যাডামসের কয়েকটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস জব্দ করেছে এফবিআই। যদিও সেগুলো আবার মেয়রকে ফেরত দেওয়া হয়েছে। তবে এ খবর টক অব দ্য সিটিতে পরিণত হয়েছে।
এদিকে গত ১৩ নভেম্বর মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে আইফোন ও আইপ্যাড জব্দ নিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের মুখে পড়েন মেয়র এরিক অ্যাডামস। জবাবে মেয়র তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
৬ নভেম্বর সোমবার রাতে মেয়রের দুটি আইফোন ও একটি আইপ্যাড জব্দ করে এফবিআই। নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত এ বিষয়ে প্রথম প্রতিবেদনে বলা হয়, তুরস্ক সরকারের দেওয়া অবৈধ বিদেশি অনুদান এরিক অ্যাডামসের নির্বাচনী ক্যাম্পেইনে দেওয়া হয়েছিল কি না, তা নিয়েই তদন্ত করছে এফবিআই।
মেয়রের নির্বাচনী ক্যাম্পেইনের আইনজীবী বয়েড জনসন জানান, এফবিআই অভিযোগটির ব্যাপারে মেয়রকে জানিয়েছে। তিনি বলেন, ‘এফবিআইয়ের অনুরোধে তিনি (এরিক) তার ইলেকট্রনিকস ডিভাইসগুলো জমা দিয়েছেন। এরিকের বিরুদ্ধে কোনো অপরাধের অভিযোগ আনা হয়নি এবং তিনি তদন্তে সহযোগিতা করছেন।’
নিউইয়র্ক সিটি মেয়র এবং সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা এরিক অ্যাডামস এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আইন প্রয়োগকারী সংস্থার একজন প্রাক্তন সদস্য হিসেবে আমি আশা করি, আমার সব স্টাফ আইন মেনে চলবেন এবং যেকোনো ধরনের তদন্তে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করবেন। আমিও ঠিক সেটাই করব। আমার লুকানোর কিছু নেই।’
গত সপ্তাহে এরিক অ্যাডামসের নির্বাচনী প্রচারণায় শীর্ষ তহবিল সংগ্রহকারী ব্রায়ানা সাগসের ব্রুকলিনের বাড়িতে অভিযান চালানো হলে তদন্তটির ব্যাপারে প্রথম জানা যায়। ২৫ বছর বয়সী সাগস একজন লবিস্ট এবং অ্যাডামসের প্রাক্তন সহযোগী। এফবিআই তখন দুটি ল্যাপটপ, তিনটি আইফোন এবং ‘এরিক অ্যাডামস’ নামের একটি ফোল্ডার জব্দ করেছে বলে জানা গেছে।
নিউইয়র্কের আরো কয়েকটি বাড়ি এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানেও এফবিআই তল্লাশি করেছে। তবে এরিক অ্যাডামসের ইলেকট্রনিক ডিভাইস জব্দ করার মাধ্যমে তাঁকে সরাসরি তদন্তে যুক্ত করা হলো। সার্চ ওয়ারেন্ট পর্যালোচনা করে নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, নির্বাচনী প্রচারণায় তুরস্ক সরকারের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন কি না এরিক অ্যাডামস সেই ইঙ্গিত ছিল। সেই সঙ্গে অন্য কোনো দেশের অনুদানের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে কি না, সেটাও খতিয়ে দেখছে এফবিআই।
এদিকে প্রয়োজনীয় পর্যবেক্ষণ শেষে এফবিআই কর্মকর্তারা নিউইয়র্ক সিটি মেয়র এরিক অ্যাডামসের জব্দকৃত ফোন ও আইপ্যাড ফেরত দিয়েছে বলে জানা যায়। আদালতের সার্চ ওয়ারেন্টের আওতায় প্রধান ফান্ডরেইজার ব্রায়ানা সাগসের ব্রুকলিনের বাড়িসহ নিউইয়র্ক এলাকার বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে অনেকগুলো অভিযান পরিচালনা করেছিল এফবিআই কর্মকর্তারা। অতঃপর অভিযোগ সংশ্লিষ্ট প্রমাণাদি খতিয়ে দেখার বৃহত্তর স্বার্থেই তদন্তকারী এফবিআই কর্মকর্তারা নিউইয়র্ক সিটি মেয়র এরিক এডামসের ফোন ও আইপ্যাড জব্দ করেছিলেন বলে জানা যায়।
ডেমক্র্যাটিক দলীয় মেয়র এডামসের ২০২১ সালের ক্যাম্পেইন ফান্ড রেইজিং (নির্বাচনী তহবিল সংগ্রহ) সংশ্লিষ্ট অভিযোগ তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত এফবিআই এবং নিউইয়র্ক সাউদার্ন ডিস্ট্রিস্টের এটর্নীর দপ্তর অ্যাডামসের নির্বাচনী ক্যাম্পেইন বেআইনীভাবে বৈদেশিক চাঁদা গ্রহণের আনীত অভিযোগ খতিয়ে দেখার পর মেয়রের জব্দকৃত ফোন ও আইপ্যাড ফেরত দিয়েছেন। অবশ্য অদ্যাবধি অ্যাডামস কোন ধরনের অন্যায় করেছেন এমন অভিযোগ আনা হয়নি মেয়রের বিরুদ্ধে।
প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ব্রুকলিনভিত্তিক নির্মাণ কোম্পানির যোগসাজসে অ্যাডামসের ২০২১ সালের নির্বাচনী তহবিলে বৈদেশিক অনুদান জমা হয়েছিল কি না তদন্তের মাধ্যমে তা নিশ্চিত হওয়ার লক্ষ্যে এফবিআই এজেন্টদের টিমগুলো ২ নভেম্বর অনেকগুলো সার্চ ওয়ারেন্ট পরিচালনা করেছিল।
এদিকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সাবেক কর্মকর্তা মেয়র অ্যাডামস তদন্তকার্যে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন। এডামসের ক্যাম্পেইন এটর্নী এবং মুখপাত্র বয়ড জনসন মিডিয়াকে জানান যে তদন্তকারী কর্মকর্তারা অ্যাডামসের ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি তাদের প্রদানের অনুরোধ করা মাত্রই মেয়র তাদের হাতে সব কিছু স্বেছায় তুলে দেন। জনসন আরও বলেন, ফেডারেল তদন্ত সম্পর্কে অবহিত হওয়ার পর প্রমাণ মিলেছে যে একজন জনৈক ব্যক্তি অন্যায় করেছিলেন। স্বচ্ছতা এবং সহযোগিতার স্বার্থে তদন্তকারী কর্মকর্তাদের তা আগেভাগেই জানানো হয়েছে।
জনসন জোর দিয়ে বলেন, মেয়র কোন অপরাধ করেননি এবং তদন্তকারী কর্মকর্তাদের সার্বিক সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। গত সপ্তাহে সাগসকে মেয়র এডামস একজন পেশাদার ব্যবসায়ী হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। তথ্যানুযায়ী ব্রুকলিন বরো প্রেসিডেন্ট হিসেবে অ্যাডামস কমপক্ষে দুই বার তুরস্ক সফর করেছিলেন। ২০১৫ সালের আগস্টে তুরস্ক কন্স্যুলেটের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় এডামস তুরস্ক সফর করেন এবং ইস্তাম্বুলের আসকুডার ডিস্ট্রিক্টের সাথে সিস্টার সিটি সমঝোতায় স্বাক্ষর করেন। অভিযোগ অনুসারে মেয়র অ্যাডামস ৬ থেকে ৭ বার তুরস্ক সফর করেছেন; সিটির টার্কিস আমেরিকান কমিউনিটির সাথে তার রয়েছে হরিহর আত্মা এবং সম্প্রতি লোয়ার ম্যানহাটনে ফ্ল্যাগ-রেইজিং (পতাকা উত্তোলন) অনুষ্ঠানমালায় অংশ নেন।
সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্ক সাউদার্ন ডিস্ট্রিস্টের অ্যাটর্নির দপ্তর নিউজার্সির ডেমোক্র্যাট সিনেটর বব মেনেনডেজের বিরুদ্ধে মিশরীয় সরকারকে সাহায্যের বিনিময়ে ঘুষ গ্রহণ বিষয়ক দুর্নীতি সংশ্লিষ্ট অভিযোগ দায়ের করেছে। উক্ত অভিযোগে মেনেনডেজ নিজকে নির্দোষ দাবি করেছেন।
অভিযোগ অনুসারে; ভিনদেশি বাসিন্দাদের নির্বাচনে চাঁদা দেয়া নিষিদ্ধ বিধায় তারা সম্ভবত নিউইয়র্কের টার্কিস কমিউনিটির মাধ্যমে অ্যাডামসের ২০২১ সালের নির্বাচনী তহবিলে চাঁদা দিয়েছিল এবং তুরস্কে জন্মগ্রহণকারী আমেরিকার নাগরিকদের স্ট্র কন্ট্রিবিউটর (খড়কুটো চাঁদা দাতা) হিসেবে কাজে লাগিয়েছিল। উক্ত ফাঁক ফোঁকরের মাধ্য আমেরিকান নাগরিকরা মূলত চাঁদা না দিলেও ভিনদেশি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থের অবাধ প্রবাহ কার্যকর থাকে।
এদিকে নিউইয়র্ক সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্টের ফেডারেল প্রসিকিউটররা এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছেন।