Thikana News
১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

‘গ্যাং অফ এইট’ সিনেটরের বড় ধাক্কায় অভিবাসন সংস্কার স্থবির

‘গ্যাং অফ এইট’ সিনেটরের বড় ধাক্কায় অভিবাসন সংস্কার স্থবির


মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ‘গ্যাং অফ এইট’ সিনেটরের বড় ধাক্কায় দীর্ঘদশ বছর ধরে অভিবাসন সংস্কার স্থবির হয়ে আছে। ২০১৩ সালের এই মাসেসিনেটর চাক শুমার ঘোষণা করেন, ‘আমরা সবাই জানি যে আমাদের অভিবাসন ব্যবস্থা ভেঙে গেছে এবং এটি ঠিক করার জন্য কাজ করার সময়  এসেছে। ’আর সিনেটর জন ম্যাককেইন উইনস্টন চার্চিলকে উদ্ধৃত করেছিলেন। কিন্তু লিন্ডসে গ্রাহামই সবচেয়ে সাহসী ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন।দক্ষিণ ক্যারোলাইনার এই রিপাবলিকান বলেন, ‘আমি মনে করি ২০১৩ সাল হলো অভিবাসন সংস্কারের বছর।’
রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট উভয় পক্ষের ‘গ্যাং অফ এইট’ সিনেটররা আশাব্যাঞ্জক ঘোষণা দেয়ার জন্য ওয়াশিংটনের একটি মিলনায়তনে জড়ো হয়েছিলেন। তাদের এই ধাক্কার পর  আর কোনো বছরই এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ হয়নি। প্রকৃতপক্ষে, আজকের রাজনৈতিক চিত্র এতটাই নাটকীয়ভাবে পরিবর্তিত হয়েছে যে অভিবাসী অ্যাডভোকেট এবং বছরের পর বছর ধরে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন নীতির শীর্ষস্থানীয় স্থপতিরা আশঙ্কা করছেন, অভিবাসন সংশোধনের আশা আগের যেকোনোসময়ের চেয়ে এখন আরও দূরে বলে মনে হচ্ছে।
অনেক রিপাবলিকান এখন সীমান্তে জিরো টলারেন্সের আহ্বানকে তাদের মূল সমর্থকদের সংহত করার উপায় হিসেবে দেখছেন। অন্যদিকে ডেমোক্র্যাটরা কঠোর সীমান্ত বিধিনিষেধ এবং অভিবাসন নীতিকে সহজ ও মানবিক করার প্রচেষ্টার মধ্যে গত এক দশক কাটিয়েছেন।
সর্বশেষ বিস্তৃত প্যাকেজটি আসে ১৯৮৬ সালে প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগানের আমলে এবং এর চার বছর পর প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচ.ডব্লিউ. বুশ আরও সীমিত প্রচেষ্টায় স্বাক্ষর করেন। তার মানে যখন সেলফোন ও ইন্টারনেট নতুন ছিল তখনকার লিখিত আইন প্রয়োগ করে ফেডারেল এজেন্টরাআজ ড্রোন এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো সরঞ্জাম দিয়ে সীমান্ত পাহারা দিচ্ছেন। সবচেয়ে ভয়ঙ্করভাবে সমস্যাটি প্রকাশ পায় গত মাসে মেক্সিকো সীমান্তের একটি আটক কেন্দ্রে আগুনে পুড়িয়ে ৩৯ অভিবাসীকে হত্যার মাধ্যমে।
কংগ্রেস ২০১৩ সালে গ্যাং অফ এইটের সাথে অভিবাসন সংক্রান্ত একটি অগ্রগতির সবচেয়ে কাছাকাছি পৌঁছেছিল। এই গ্যাংয়ের মধ্যে নিউইয়র্কের ডেমোক্র্যাট বর্তমান সিনেট সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা চাক শুমার এবং ফ্লোরিডার রিপাবলিকানসিনেটর মার্কো রুবিও রয়েছেন। তাদের প্রস্তাবটি ওই বছরের জুন মাসে সিনেটে উত্থাপন করা হয়। এটিতেসীমান্ত নিরাপত্তা কঠোর ও শ্রমিকদের বৈধ অবস্থাযাচাই করার বিষয়ে নিয়োগকর্তাদের বাধ্যবাধকতা আরোপ করার সময় দেশে অবৈধভাবে থাকা লাখ লাখ অভিবাসীর নাগরিকত্বও কাজের ভিসা প্রসারিত করার একটি পথ চাওয়া হয়।
কিন্তু রিপাবলিকান হাউস স্পিকার জন বোহেনার ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে জিওপি-নিয়ন্ত্রিত চেম্বারে গ্যাং অফ এইট বিল সমর্থন করে বলেন, অনেক আইনপ্রণেতা ওবামা প্রশাসনকে অবিশ্বাস করেন। পরেওই গ্রীষ্মে বিলটি বাতিল হয়ে যায়। 
ওবামা তখন শিশুকালে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে আনা অভিবাসীদের বিতাড়ন থেকে রক্ষা করার জন্য ‘ডিফার্ড অ্যাকশন ফর চাইল্ডহুড অ্যারাইভলস-ডাকা’ নামে একটি প্রকল্প তৈরি করেন। সুপ্রিম কোর্ট আগে এটিকে বহাল রাখে। তবে আদালতের বিচারকদের সাম্প্রতিক ৬-৩ রক্ষণশীল সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রকল্পটির দীর্ঘমেয়াদী হুমকির কারণ হতে পারে।
ওবামার ডাকা প্রোগ্রাম তৈরির কয়েক বছর পরেপ্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দেশের ২ হাজার মাইল দীর্ঘ দক্ষিণ সীমান্ত বরাবর প্রাচীর নির্মাণ করার উদ্যোগ নেন এবং তার প্রশাসন অভিবাসী শিশুদের তাদের বাবা-মার কাছ থেকে আলাদা করে। এছাড়া মার্কিন আশ্রয় চাওয়ার সময় অভিবাসীদের মেক্সিকোতে অপেক্ষা করতে বাধ্য করে।
বাইডেন ক্ষমতায় এসেই একটি সুইপিং ইমিগ্রেশন প্যাকেজকে সমর্থন করেন, তবে এটি কংগ্রেসে কোথাও যায়নি। তার প্রশাসন তখন থেকে ট্রাম্পের কিছু অভিবাসন নীতি সহজ করেছে এবং অন্যকে কঠোর করেছে। এমনকি তার দল হিস্পানিক ভোটারদের মধ্যে রিপাবলিকান সমর্থন বৃদ্ধিও দেখেছে।
কর্মকর্তারা টাইটেল ৪২ মহামারি-যুগের স্বাস্থ্য বিধিনিষেধ প্রয়োগ অব্যাহত রেখেছেন যা মার্কিন আশ্রয়প্রার্থী অভিবাসীদের দ্রুত বহিষ্কার করার অনুমতি দেয়, যদিও তাদের মেয়াদ ১১ মে শেষ হতে চলেছে। ওবামা ও ট্রাম্প প্রশাসন আমলেরআশ্রয় মামলারকারণে অপেক্ষারত অভিবাসী পরিবারগুলোকে বাইডেনের হোয়াইট হাউস আটক কেন্দ্রে রাখার কথাও বিবেচনা করছে।
ওবামার অধীনে ইউএস কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রোটেকশনের কমিশনার গিল কেরলিকোস্কে বলেন, ‘একসাথে অনেক কিছু একত্রিত হচ্ছে’, যার মধ্যে টাইটেল ৪২ সম্ভবত শেষ হচ্ছে। দক্ষিণ আমেরিকার অভিবাসীদের কলম্বিয়া ও পানামার মধ্যে ডারিয়ান গ্যাপেরভয়ঙ্কর রেইনফরেস্টের মধ্য দিয়ে পাড়ি দেওয়া সংখ্যার বৃদ্ধি এবং ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন রাজনৈতিক চাপকে বাড়িয়ে তুলছে।
কেরলিকোস্কে বলেন, ‘বাইডেন প্রশাসনে আড়াই বছরে অভিবাসন নীতি কী তা নিয়ে সত্যিই কোনো ঘোষণা আসেনি। আইন পাস করা প্রায় অসম্ভব। কিন্তু নীতি কি ছিল?’
ফেডারেল কর্তৃপক্ষ ২০২২ সালে দক্ষিণ সীমান্তে ২.৫ মিলিয়নেরও বেশি বার অভিবাসীদের আটক অভিযান পরিচালনা করেছে। এর মধ্যে শুধু ডিসেম্বর মাসেই ২ লাখ ৫০ হাজার বারের বেশি অভিবাসী আটক অভিযান পরিচালনা করে যা রেকর্ড। তবে চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে অভিবাসীদের সাথে সংঘর্ষের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে।
কিন্তু কম ক্রসিং সীমান্তের মেক্সিকান পাশে অপেক্ষারত মার্কিন আশ্রয়ের আশায় হাজার হাজার অভিবাসীর জটলা তৈরি করেছে। অভিবাসীদের বিতাড়নের ভয়ে বিক্ষোভের মধ্যে গত মাসে মেক্সিকোর সরকারি স্থাপনায় আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। আটকদের মধ্যে কেউ কেউ জানায়, তারা অনলাইনে আবেদন করার চেষ্টাকালে মেক্সিকো কর্তৃপক্ষ তাদের আটক করে।
এদিকে, গরম মাসগুলোতে প্রায়শই মার্কিন সীমান্তে অভিবাসীদের বেশি দেখা যায়। অ্যাক্টিভিস্টরা বলছেন,বাইডেন টাইটেল ৪২ প্রয়োগ এবং পারিবার আটক কেন্দ্রগুলো পুনরায় খোলার বিষয়ে বিবেচনা করে মিশ্র সংকেত পাঠিয়েছেন। শীর্ষস্থানীয় ডেমোক্র্যাটরাও এখন এর নিন্দা করছেন।
শুমার ও ১৭ জন সিনেট ডেমোক্র্যাট সম্প্রতি বাইডেনের কাছে এক চিঠিতে লিখেছেন,‘আমরা আপনাকে আপনার পূর্বসূরীদের ভুল থেকে শিখতে এবং এই ব্যর্থ নীতি বাস্তবায়নের যেকোনো পরিকল্পনা পরিত্যাগ করার জন্য অনুরোধ করছি।’ তারা পারিবারিক আটক নীতিগুলোকে অভিবাসন ব্যবস্থাপনা হাতিয়ার হিসেবে নৈতিকভাবে নিন্দনীয় এবং অকার্যকর বলে অভিহিত করেন।
রিপাবলিকানরা বাইডেনের ‘সীমান্ত সংকট’কে সমালোচনা করেছেন। ট্রাম্পের উত্থানের পর থেকে কিছু ল্যাটিনো এলাকায় তারা ভোটারদের মধ্যে সাফল্য লাভ করেন। ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডিস্যান্টিসটেক্সাস থেকে ম্যাসাচুসেটসের মার্থা’স ভিনইয়ার্ডে অভিবাসীদের কাছে ছুটে যান এবং যুক্তি দিয়ে বলেন, সারা দেশের ডেমোক্র্যাটরা এখন মার্কিন-মেক্সিকো সীমান্তে অভিবাসীদের দমন-পীড়নকে উপেক্ষা করছে।

কমেন্ট বক্স