মাতা-পিতা, প্রিয়তমা স্ত্রী-কেউ কি কখনো ভেবেছিলেন এমন করে হারিয়ে যাবেন তাদের সাত রাজার ধন মানিক রতন। পোশাকি নাম দিদারুল ইসলাম। প্রিয়তমা স্ত্রী এবং পরিবারের সকলের প্রিয় রতন। পুলিশের ইউনিফর্ম পরা দিদারুল ইসলাম রতন ২৮ জুলাই সন্ধ্যায় বন্দুকধারী শেন ট্যামুরার ভুল টার্গেটের শিকার হয়ে করুণ মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুতে নিউইয়র্ক পুলিশে এবং বাঙালি কমিউনিটিতে নেমে আসে গভীর শোকের ছায়া। ট্যামুরার বন্দুকের গুলিতে আরও তিনজন প্রাণ হারিয়েছেন। হৃদয়বিদারক এই হত্যাকাণ্ডে পুলিশ বিভাগসহ বাঙালি কমিউনিটিকে নিদারুণ এক শোক অন্ধকারে পতিত করেছে। পিতা আব্দুর রব সন্তানের মৃত্যুশোক সইতে না পেরে হৃদরোগে আক্রান্ত হন। তিনি এখন চিকিৎসাধীন আছেন। পরিবারে চলছে শোকের মাতম। সন্তানসম্ভবা স্ত্রী অবুঝ সন্তানকে জড়িয়ে ধরে নির্বাক হয়ে পড়েছেন। দিদারুলের মৃত্যুসংবাদে আগামী মেয়র নির্বাচনে প্রাইমারি পাস করা ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জোহরান মামদানি গভীর শোক প্রকাশ করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন। বাংলাদেশ সোসাইটি নিউইয়র্কও গভীর শোক প্রকাশ করেছে। পরিবারের শোকের সঙ্গে রতনের নাড়িপোঁতা কুলাউড়ায় তার বৃদ্ধ ফুফুর মাতমে সমগ্র কুলাউড়া শোকে কাতর। গত ২১ জুলাই বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার উত্তরায় যুদ্ধ প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনার শোক বাঙালিরা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই রতনের মৃত্যুর এই শোক। বাঙালির বুকে শোক সইবার কত যে ক্ষমতা দিয়েছেন খোদা, কে জানে! দিদারুল ইসলাম রতনের পুলিশ বিভাগে যোগ দেওয়ার যুক্তি ছিল পরিবারকে একটি সম্মানজনক পরিচয় দেওয়া। কিন্তু ঘাতক শেন ট্যামুরা তার স্বপ্ন সূচনাতেই শেষ করে দিল। হন্তারক ট্যামুরার আক্রোশ ছিল ন্যাশনাল ফুটবল লিগ (এনএফএল) এর উপর। এনএফএল’র খেলা দেখার সময় তার মাথায় বলের আঘাত লাগে। এরপর মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। সে প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে ওঠে। তারই ফল ২৮ জুলাই ভুল টার্গেটে রতনের মৃত্যু। এ ঘটনায় আরও তিনজন নিহত হয়েছেন। নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগ দিদারুল ইসলামকে একজন ‘বীর’ আখ্যা দিয়েছে। নিউইয়র্ক পুলিশ কমিশনার জেসিকা টিশ বলেছেন, ‘আমরা তাকে যে দায়িত্ব দিয়েছিলাম, সেই দায়িত্ব পালন করতে গিয়েই দিদারুল সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তিনি মৃত্যুর মধ্য দিয়ে বেঁচে আছেন। তিনি একজন ‘বীর’।
দিদারুল ইসলাম রতন ‘বীর’ হয়েই বেঁচে থাকবেন। ক্ষতিপূরণ হিসেবে অনেক অর্থও হয়তো পাবেন। কিন্তু রতনের শূন্যতা কি কোনো কিছুর বিনিময়ে পূরণ হবে? স্ত্রীর বেদনা, পরিবারের শোকের কি অবসান ঘটবে? কোনো কিছুই তাদের শোকের নিরসন ঘটাতে পারবে না। মা-বাবা, স্ত্রী-সন্তানদের সারা জীবন এই শোক বয়ে বেড়াতে হবে। আমাদের প্রার্থনা, সর্বশক্তিমান রাব্বুল আলামিন যেন তাদের এই শোক সইবার শক্তি দান করেন।