Thikana News
২০ জুলাই ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫

নারকেল গাছের ছায়ায়

নারকেল গাছের ছায়ায়
চৈতি নিউইয়র্কে আজ অনেকটা সময় পর সাবওয়েতে উঠেছে। অফিসের কাজ, মিটিং, ফোনকল-সব মিলিয়ে ক্লান্ত। হঠাৎ তার চোখ আটকে গেল সাবওয়ের এক কোণে বসে থাকা একজন মানুষের ওপর। টুপি পরা, ক্লান্ত, মুখের রেখায় বয়স আর অসুস্থতার ছাপ। চোখ বুজে আছে, যেন গভীর কোনো চিন্তায় ডুবে আছে।
চৈতির বুকটা হঠাৎ কেঁপে উঠল। চেহারাটা বদলে গেছে, কিন্তু সেই চোখ, সেই ঠোঁটের কোণে লুকোনো হাসিটা... সাইফ!
চৈতির মনে পড়ে গেল অনেক বছর আগের এক দুপুরÑবাংলাদেশে তাদের স্কুলের ছাদ আর নারকেল গাছের ছায়া। সাইফ ছিল তার প্রথম ভালোবাসা। কিন্তু সমাজ, ধর্ম, পরিবারÑসব মিলিয়ে সেই সম্পর্ক কখনো পূর্ণতা পায়নি। চৈতি বিয়ের পর আমেরিকায় চলে আসে, পরিবার গড়ে তোলে। সাইফ দেশে প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসক হয়। কোনো যোগাযোগ আর হয় না।
চৈতির স্টেশন চলে এসেছে। নামতে হবে। কিন্তু সে স্থির দাঁড়িয়ে থাকে। মনে হলো, আজ সে চলে গেলে হয়তো আর কোনো দিন সাইফকে খুঁজে পাবে না। হঠাৎ সে ব্যাগ থেকে একটা ছোট কাগজ বের করে সাইফের হাতে গুঁজে দেয়, ‘কল দিয়ো।’
সেই রাতেই ফোন আসে। সাইফ জানায়, সে নিউইয়র্কে চিকিৎসার জন্য এসেছে। প্রস্টেট ক্যান্সার, শেষ স্টেজ। চৈতির হৃদয়ে ঝড় ওঠে। সে নিজের সঙ্গে আর যুদ্ধ করে না। পরদিন সে সরাসরি হাসপাতালে চলে যায়, সাইফের পাশে।
চৈতি জানে, সমাজ তাদের এক হতে দেয়নি। সে বাবার ঘরে ভালো মেয়ে ছিল, স্বামীর সংসারে দায়িত্বশীল স্ত্রী, সন্তানের কাছে আদর্শ মা। কিন্তু নিজেকে? কখনো কি ভালোবাসতে পেরেছে?
চৈতি এবার নিজের জন্য বাঁচতে চায়। সে পরিবারের কাছে জানিয়ে দেয়, ‘আমাকে ক্ষমা করো। আমি সাইফের শেষ দিনগুলো তার পাশে থাকতে চাই।’
সাইফ বলে, ‘আমার পরিবারকে বোঝাতে আমি পারিনি, কিন্তু তাদের যেন আর কোনো কষ্ট না হয়, আমি সব গুছিয়ে এসেছি। এখন শুধু তুমি পাশে থাকো।’
চৈতি জানে, এ ভালোবাসার কোনো সামাজিক স্বীকৃতি নেই। কিন্তু এখন তাতে কিছু যায় আসে না। সে প্রতিদিন জানালার পাশে দাঁড়ায়, নারকেল গাছ খোঁজে সাইফের চোখে। সাইফ তার কোলে মাথা রাখে। দুজনে মিলে পুরোনো ছায়া থেকে আবারও রোদ্দুর ছুঁয়ে দেখে।
ভালোবাসা কি মরে যায়? না।
ভালোবাসা সময়ের আড়ালে অপেক্ষা করে। ফিরে আসে একদিন-
একটা নারকেল গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে, দুটো চোখে পুরোনো দিনের আলো নিয়ে।
চৈতির মনে হয়, এবার সে সত্যি ভালোবাসতে পেরেছে।
নিজেকে।
সাইফকে।
এক জীবনের শেষ বাঁকে এসে।
শেষ পর্যন্ত-ভালোবাসাই থাকে।
সবকিছুর ওপরে।
 

কমেন্ট বক্স