ভাস্কর আক্তার আহমেদ রাশার ড্রিফটউড আর্ট এক্সিবিউশন শুরু হতে যাচ্ছে। ১০ ও ১১ মে এই দুই দিন এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে নিউইয়র্কের জ্যামাইকায়।
এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় রাখা হয়েছে, “তোমার অসীমে”। মূলত কবিগুরু রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরের বিভিন্ন কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, গানের বিভিন্ন বিষয়কে প্রতিপাদ্য সামনে রেখে ভাস্কর্যগুলোর নামকরণ করা হয়েছে। এবারের প্রদর্শনীতে স্থান পাবে মোট ৭০টি চিত্রকর্ম। এর আগে তার আরো ১২টি প্রদর্শনী হয়েছে। নিউইয়র্ক, নিউ জার্সী, পেনসেলভেনিয়া, ওয়াশিংটন ডিসিসহ বিভিন্ন স্টেটে। তিনি যতবার যতগুলো প্রদশর্নী করেন প্রতিবার একটি নতুন নতুন বিষয় থাকে। এবারের বিষয় পছন্দ করা হয়েছে কবি রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর ও তার কাজকে সামনে। এটি ১৩তম প্রদশর্নী।
আক্তার আহমেদ রাশার ভাস্কর্য প্রদর্শর্নীতে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন ঠিকানার সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি ও বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের সাবেক এমপি এম এম শাহীন। গেষ্ট অব অনার কাজী রাকিব আর প্রদশর্নীর উদ্বোধন করবেন তাজুল ইমাম। এছাড়াও এই প্রজন্মের একজন আর্টিস্ট ও কিউরেটর থাকবেন মেরিলিন রিমি। এছাড়াও অতিথিরা তার প্রদর্শনীতে এসে ছবি দেখবেন ও আলোচনায় অংশ নিবেন।
আয়োজকরা জানান, এই প্রদর্শনীতে শিল্পানুরাগীদের সবাইকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আশা করছি সবাই আসবেন।
আক্তার আহমেদ রাশা বলেন, আমি মূলত একজন ইংরেজী সাহিত্যের ছাত্র। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজী সাহিত্যে অনার্স ও মাস্টার্স করেছি। ১৯৯২ সালের ডিসেম্বর থেকে আমি এই দেশে আছি। ২০০১ সালে আমি ঢাকায় গিয়েছিলাম। সেখানে বেঙ্গল গ্যালারিতে শিল্পী ফেরদৌসী প্রিয়ভাসিনী আপার একটি প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হচ্ছিল। তার সাথে আমরা কথা বলেছিলাম। তার সাথে কথা বলার পর অনেক ভাল লেগেছে। তার কাজগুলো আমার খুব ভাল লাগছিল। সেই জন্য আমি চিন্তা করলাম এই ধরণের শিল্প আমিও তৈরি করতে পারি। তখন থেকে সেটা অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল।
দেশ থেকে এখানে ফিরে আসার পর আমি সমুদ্রের পানি থেকে বিভিন্ন কাঠের টুকরো সংগ্রহ করা শুরু করি। সেগুলো দিয়ে ভাস্কর্য তৈরি করা শুরু করি। আমার আশেপাশের প্রতিবেশিরা সেটি দেখেন। একবার একজন আমার একটি কাজ নিয়ে যান। কিছুদিন পর তিনি আমাকে দেড়’শ ডলারের একটি চেক পাঠান। এই চেক পাওয়ার পর মনে হলো এই কাজগুলো মানুষের ভাল লাগছে। সেই সাথে মানুষের কাছে চাহিদা আছে। তাই এটি তৈরি করলে মানুষ পছন্দ করবে ও কিনে নিবে। সেইভাবেই আমি কাজ করতে থাকি। এভাবেই ৩০টি ভাষ্কর্য তৈরি করা হয়। তৈরি করার পর আমার এক ভাই আছেন তিনি আবৃত্তিকার। তিনি আমার তৈরি ভাস্কর্য খুব পছন্দ করেন। তিনি বলেন তোমার কাজগুলো নিয়ে একটি প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করবো। তখন আমার কাজ হয়েছে ২৫/৩০টি । তিনি একটি হলও বুকিং দেন। আমি ৬৬টি কাজ শেষ করার পর প্রদর্শনীর জন্য দেই। ২০১৫ সালে প্রথম প্রদশর্র্নী হলো। এই প্রথম প্রদশর্নীতেই ৩৩টি ভাস্কর্র্য বিক্রি হয়ে গেল। এরপর ২০১৭, ২০১৮ এবং ধারাবাহিকভাবে প্রদশর্ন হয়ে আসছে। যখন যে প্রদর্শনী হচ্ছে সেখানেই ভাস্কর্য বিক্রি হচ্ছে। ২০২৩ সালে ঢাকায় একটি এবং রংপুরে আমার একটি প্রদশর্নী হলো। বেশ ভালই সারা পাওয়া গিয়েছে। আহমেদ রাশা বলেন, আমি মূলত: আটলান্টিক সাগরের কাছাকাছি থাকি। বিভিন্ন গাছ যখন সাগরে পড়ে যায় এবং পড়ে আস্তে আস্তে ভাসতে ভাসতে আসতে থাকে। এই ভাসতে ভাসতে আসতে থাকা কাঠগুলোতে কোন পোকা মাকর থাকে না এবং ভাল। আমি সমুদ্রের পাড়ে গিয়ে সেগুলো নিয়ে আসি। প্রতিটি কাঠের টুকরোই যেন এক একটি ভাস্কর্র্য। এটাতে আমি খুঁজে খুঁেজ বের করে এরপর ভাষ্কর্য তৈরি করি। এক সময়ে শখ থেকেই এটি তৈরি করা শুরু করি। মূলত আমি একজন হেলথ প্রফেশনাল হলেও ভাষ্কর্য তৈরি করতে আমার খুব ভাল লাগে। সেই হিসাবে আমি কাজ করে যাচ্ছি।
আক্তার আহেমদ রাশার কাছে জানতে চাওয়া হয় এই ভাস্কর্য প্রদশর্নী থেকে কেনার সুযোগ থাকবে কিনা তিনি বলেন, হ্যাঁ যারা এই শিল্পের অনুরাগী তারা ভাষ্কর্য কিনে নিতে পারবেন। এগুলোর মূল্য রয়েছে সাড়ে তিন’শ ডলার থেকে দুই হাজার ডলার পর্যন্ত। তিনি বলেন, আমি আশা করছি নিউইয়র্কের মানুষেরা আসবেন ও প্রদর্শনীটি উপভোগ করবেন। তিনি জানান এইটি হবে জ্যামাইকার ১৪৮ সিস্ট্রের ৪৮ নম্বর ভবনে। এটি হিলসাইড এভিনিউতে।