Thikana News
১৭ মে ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শনিবার, ১৭ মে ২০২৫

অতি দর্পে হত লঙ্কা!

অতি দর্পে হত লঙ্কা!
বিশ্ববাসীর দৃষ্টিতে যুক্তরাষ্ট্র আধুনিক বিশ্বের তিলোত্তমা। প্রাচুর্য ও সমৃদ্ধির বিচারে পুরাণে বর্ণিত রাক্ষসরাজ রাবণের লঙ্কাপুরী বা ভূস্বর্গ। গণতন্ত্রের অনুশীলন ও চর্চার বিচারে সর্বেসর্বা। সাম্য, ন্যায়বিচার ও আইনের শাসনের মানদণ্ডে সতী মায়ের সতী কন্যা। আর বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও পারমাণবিক শক্তির বিচারে বিশ্বের অদ্বিতীয় পরাশক্তি। যুুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি প্রধানত রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট দুটি শিবিরে বিভক্ত। রিপাবলিকানরা যেকোনো মূল্যে আমেরিকার শ্রেষ্ঠত্ব এবং শ্বেতাঙ্গদের আভিজাত্য বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর। আর ডেমোক্র্যাটরা অভিবাসীদের প্রতি প্রকাশ্যে দরদ দেখিয়ে দল ভারী করলেও আমেরিকার স্বার্থে রিপাবলিকান-আমেরিকান হরিহর আত্মা। অনস্বীকার্য যে আমেরিকা বিশ্ব অভিবাসীর দেশ। ধর্ম-বর্ণ-গোষ্ঠী-ভাষাভাষী-সম্প্রদায় নির্বিশেষে সারা বিশ্বের কোটি কোটি অভিবাসীর শ্রম-ঘাম ও ফোঁটা ফোঁটা রক্তে গড়ে উঠেছে আমেরিকার সভ্যতা-সংস্কৃতি-আভিজাত্য-প্রাচুর্য ও গগনচুম্বী সমৃদ্ধি। তাই আধুনিক বিশ্বের অমরাবতী আমেরিকার মায়া মরীচিকার হাতছানিতে প্রলুব্ধ হয়ে সারা বিশ্বের অসংখ্য ভাগ্যান্বেষী জনতা জীবনঝুঁকি নিয়ে পঙ্গপালের মতো আমেরিকায় ভিড় জমায়। এ ছাড়া জীবনের রঙিন স্বপ্ন বাস্তবায়নে উন্মুখ সারা বিশ্বের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কিশোর-কিশোরী ১৫ বছর বয়সে পদার্পণের পূর্বে কোনো না কোনোভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছিল। ড্রিমার হিসেবে পরিচিত ১০ লক্ষাধিক কিশোর-যুবক স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষালাভের পর যুক্তরাষ্ট্রে বৈধভাবে বসবাসের সুযোগ না পাওয়ায় বর্তমানে বহিষ্কারের ঝুঁকি নিয়ে চকিত চরণ হরিণীর মতো উৎকর্ণ ও শঙ্কিত জীবন কাটাচ্ছেন। আবার প্রায় ৩৩ কোটি ৪৫ লাখ জনসংখ্যার মধ্যে ১ কোটি ১০ লক্ষাধিক কাগজপত্রহীন অভিবাসীর মাথার ওপর বহিষ্কারের মরণ খড়গ ঝুলছে। অথচ নিয়তির নির্মম বিধানে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অবৈধ অভিবাসী বিতাড়নে মরিয়া হয়ে উঠেছেন এবং সুপ্রিম কোর্টের বিশেষ নির্দেশে (বর্তমানে সাময়িকভাবে স্থগিত) ১৭৭৯ সালে প্রণীত যুদ্ধকালীন আইনকে স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ার হিসেবে কাজে লাগাচ্ছেন।

সংগত কারণেই উল্লেখ করতে হচ্ছে, আমেরিকার ২৩৬ বছরের ইতিহাসে ২০০৮ সাল নিয়তিলাঞ্ছিত ও অধিকারবঞ্চিত কৃষ্ণকায় আমেরিকানদের জীবনে ছিল সর্বাপেক্ষা গৌরবোজ্জ্বল বছর। ২০০৮ সালে কৃষ্ণকায় আমেরিকানদের সুযোগ্য উত্তরসূরি বারাক ওবামা রিপাবলিকান দলীয় প্রার্থীকে পরাজিত করে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৪তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে গোটা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন।
ভাগ্যের বরপুত্র ট্রাম্প : ২০১৬ সালের নির্বাচনে আমেরিকার রাজনৈতিক অঙ্গনে ভাগ্যের বরপুত্র হিসেবে আবির্ভূত হন প্রথিতযশা রিয়েলটর ডোনাল্ড ট্রাম্প। নিউইয়র্কে জন্মগ্রহণকারী লব্ধপ্রতিষ্ঠ রিয়েলটর ট্রাম্প ২০১৬ সালের নির্বাচনে রিপাবলিকান দলীয় প্রার্থী হিসেবে চার তারকাবিশিষ্ট সাবেক জেনারেল ও ডাকসাইটে সিনেটর জন কেরিকে পরাজিত করে ৪৫তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। অবশ্য নির্বাচনে রাজনৈতিক অযাচিত হস্তক্ষেপসহ নানা অভিযোগে ডেমোক্র্যাট নিয়ন্ত্রিত হাউস ট্রাম্পকে অভিসংশন করে এবং চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য সিনেটে প্রেরণ করে। অবশ্য অভিসংশনের হাত থেকে ট্রাম্প অব্যাহতি পেলেও ২০২০ সালের সিংহভাগ সময় ট্রাম্পকে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার পরিবর্তে নানাবিধ অভিযোগ এবং মামলা-মোকদ্দমার পেছনে ব্যয় করতে হয়েছিল।

২০২০ সালের নির্বাচন ও গোবেচারা ট্রাম্প : ২০২০ সাল ছিল ট্রাম্পের জীবনের সর্বাপেক্ষা বিপৎসংকুল অধ্যায়। আবার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ট্রাম্প ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স কিংবা গুরুত্বপূর্ণ ক্যাবিনেট সদস্যদের পরামর্শ বিন্দুমাত্র আমলে নিতেন না। তাই ট্রাম্পের ক্যাবিনেটের গুরুত্ব মন্ত্রীদের সিংহভাগই প্রায়শ পদত্যাগ করেছিলেন এবং শেষের দিকে ট্রাম্প পুরোপুরি নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছিলেন। ফলে ২০২০ সালের নির্বাচনে ঢাল নেই, তলোয়ার নেই নিধিরাম সর্দারের মতো ট্রাম্পকে এককভাবে মোকাবিলা ও পরাজয় বরণ করতে হয়েছিল। অথচ নির্বাচনে সূক্ষ্ম কারচুপি এবং জালিয়াতির ভিত্তিহীন অভিযোগে ফলাফল বাতিলের সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর ট্রাম্প ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি একক সিদ্ধান্তে ক্যাপিটল হিল দাঙ্গার ইন্ধন জুগিয়েছিলেন। ওই দাঙ্গায় কয়েকজন প্রাণ হারিয়েছিল এবং যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে কলঙ্কজনক অধ্যায়ের সংযোজন হয়েছিল। অবশ্য এমনতর অবিবেচনাপ্রসূত এবং হঠকারী সিদ্ধান্তের জন্য ২০২১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ট্রাম্পকে অনবরত চরম নাকানি-চুবানি খেতে হয়েছিল। কর ফাঁকি, মুখ বন্ধ রাখার শর্তে পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলকে প্রদত্ত হাশমানি, শপথ নিয়ে মিথ্যা বলা, ক্যাপিটল দাঙ্গাসহ বিভিন্ন ফৌজদারি মামলার আসামি হিসেবে আদালতে ছোটাছুটি করতে করতে ২০২১ থেকে ২০২৪ সালে ট্রাম্পের নাভিশ্বাস উঠেছিল। এমনকি ফৌজদারি মামলায় ৪৪ কাউন্টে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে একমাত্র বিদায়ী প্রেসিডেন্ট হিসেবে জীবনের বাদবাকি সময় ট্রাম্পের রিকারস আইল্যান্ড ফ্যাসিলিটিতে কাটানোর সম্ভাবনাও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল। অবশেষে ভাগ্যলক্ষ্মী মুখ তুলে তাকানোর ফলে ২০২৪ সালের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে রিপাবলিকান দলীয় প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের বিগত এক শতাব্দীর রাজনৈতিক ইতিহাসে মহাকাব্যের মহানায়ক হিসেবে আবির্ভূত হন। হাউস, কংগ্রেস এবং পপুলার ভোটে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে ট্রাম্প গোটা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেন এবং কারাকক্ষের স্থলে বৈধভাবে ওভাল অফিস দখল করেন। এদিকে ট্রাম্পের সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার সিকিউরিটি এজেন্সি (সিআইএসএ) দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ক্রিস ক্রেবস এবং হোমল্যান্ড সিকিউরিটি কর্মকর্তা মাইলস টেইলর ২০২০ সালের অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের সপক্ষে সাফাই গেয়েছিলেন। ফলে ট্রাম্প তাদের ওপর চরমভাবে ক্ষিপ্ত হয়েছিলেন।
দ্বিতীয় দফা ওভাল অফিসে ট্রাম্প : দ্বিতীয় দফা ওভাল অফিস দখলের অব্যবহিত পরপরই ট্রাম্প নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণের অঙ্গ হিসেবে সীমান্ত সিলগালাসহ অবৈধ অভিবাসী বহিষ্কারে মরিয়া হয়ে ওঠেন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে অভিবাসীদের রাতারাতি খেদানোর লক্ষ্যে ট্রাম্প প্রশাসন, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি, ইউএস ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট এজেন্সি, স্টেট ল’ এনফোর্সমেন্ট, হাইওয়ে প্যাট্রোল, দ্য স্টেট কোস্ট গার্ড, দ্য ডিপার্টমেন্ট অব এগ্রিকালচারাল ল’ এনফোর্সমেন্ট এবং ফিশ অ্যান্ড ওয়াইল্ডফায়ার কনজারভেশন কমিশন সদস্যদের সমভিব্যাহারে গঠন করেন বিশেষ বাহিনী। আর স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তা সমভিব্যাহারে ইউএস ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট ফার্স্ট-অব-ইটস-কাইন্ড শিরোনামে ম্যাসিভ, মাল্টি-এজেন্সি ইমিগ্রেশন এনফোর্সমেন্ট ক্র্যাকডাউনের আওতায় বিভিন্ন স্থানে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে হাজার হাজার অভিবাসীকে গ্রেপ্তার এবং বহিষ্কারের মরণ আঘাত হানে ট্রাম্প প্রশাসন। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ওই অভিযানে দুই দিনে ফ্লোরিডা থেকে আট শতাধিক এবং কলারাডো থেকে শতাধিক অভিবাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এমনকি ঝটিকা বেগে গ্যাঙ সদস্যদের বহিষ্কারে সহায়তায় ১৭৯৮ সালে প্রণীত যুদ্ধকালীন আইনকেও কাজে লাগানো হচ্ছে। অধিকন্তু ফেডারেল সরকারের অভিবাসন প্রচেষ্টায় সহযোগিতা করতে স্থানীয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাধ্য করা হয়। অভিবাসন-বিষয়ক কর্মকাণ্ডে ফেডারেল কর্তৃপক্ষকে কোনো স্থানীয় কর্মকর্তা সাহায্য না করলে তার বিরুদ্ধে জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট তদন্তের নির্দেশ প্রদান করে এবং মিলওয়াকি কাউন্টি সার্কিট জজ হানা ডুগান একজন অবৈধ অভিবাসীকে গ্রেপ্তার এড়াতে সাহায্য করায় এফবিআই ওই জজকে গ্রেপ্তার করা হয়। অফিশিয়াল প্রোক্লেমেশন : সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অফিশিয়াল প্রোক্লেমেশন (দাপ্তরিক ঘোষণাপত্র) জারি করেছেন। প্রোক্লেমেশনে স্বাক্ষরদানকালে ট্রাম্প ঘোষণা করেন, ক্রেবস মিথ্যার আশ্রয়ে এবং ভিত্তিহীনভাবে ২০২০ সালের নির্বাচনে কারচুপি ও অনিয়ম অস্বীকার করেছেন। অবশ্য ট্রাম্পের বক্তব্য এবং নির্বাচনে অনিয়মের অদ্যাবধি কোনো নির্ভরযোগ্য প্রমাণাদি মেলেনি। আর সাবেক হোমল্যান্ড সিকিউরিটি কর্মকর্তা মাইলস টেইলরকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিশ্বাসভঙ্গের দায়ে অভিযুক্ত করেছেন। এর সপক্ষেও অদ্যাবধি কোনো প্রমাণ মেলেনি। যাহোক, বোদ্ধা সমাজের দৃষ্টিতে ট্রাম্পের নতুন প্রোক্লেমেশন নির্বাচনের সঙ্গে সম্পৃক্ত বর্তমান কর্মকর্তাদের জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ হুঁশিয়ারি। নির্বাচনে অনিয়ম কিংবা কারচুপি সংঘটিত হোক বা না হোক প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করতে গেলেই তদন্তের সম্মুখীন হতে হবে।

বিনা পয়সায় আইনি পরিষেবা দাবি : অনুমেয় শত্রুপক্ষের প্রতিনিধিত্বকারী আইনি প্রতিষ্ঠানগুলোর (ল’ ফার্ম) কাছ থেকে বিনা পয়সায় পরিষেবা দাবি করেছেন, বিচারকদের অভিসংশনের হুমকি দিয়েছেন এবং ক্যাম্পাসে বিক্ষোভকারীদের বেলায় বৈধ/অবৈধ নির্বিশেষে সকলকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের দ্ব্যর্থহীন ঘোষণা দিয়েছেন। ওই ঘোষণাপত্রে সাদামাটা ভাষায় ট্রাম্প বলেছেন, ট্রাম্প ২.০ এর আওতায় গণতন্ত্রের সূতিকাগার হিসেবে আধুনিক বিশ্বে স্বীকৃত যুক্তরাষ্ট্রে কোনো ধরনের মতপার্থক্য বা ভিন্নতা বরদাশত করা হবে না। বিনা পয়সায় পরিষেবা দাবি প্রসঙ্গে পনি আপের এইড স্টিফেন মিলার জানান, পিউনিটিটিভ প্রোক্লেমেশন এড়াতে তার প্রতিষ্ঠান ট্রাম্পের জন্য বিনা খরচে ৭০০ মিলিয়ন ডলারের কাজ করতে সম্মত হয়েছে। স্মল বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের অ্যাডমিনিস্ট্রেটর কেলি লোয়েফার জানান, ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের প্রস্তাবের সঙ্গে মতানৈক্যের কারণে সংস্থার আটলান্টা, বস্টন, শিকাগো, ডেনেভার, সানফ্রান্সিসকো, নিউইয়র্ক ও সিয়াটলের দপ্তরগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অধিকন্তু ভেনিজুয়েলাসহ কয়েকটি দেশের নয় লক্ষাধিক বৈধ অভিবাসন বাতিলে ট্রাম্প প্রশাসন বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানা যায়।

অযাচিত হস্তক্ষেপের উদ্যোগ : ঐতিহ্যবাহী হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়, প্রিন্সটন, কর্নেল এবং নর্থ ওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাতিষ্ঠানিক দেখভাল ও স্বাধীনতায় অযাচিত হস্তক্ষেপে ব্যর্থ হয়ে ট্রাম্প প্রশাসন আইভি লিগ স্কুল ফেডারেল ফান্ডিং (তহবিল বরাদ্দ) স্থগিতের উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানা যায়। এক পত্রে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট এলান এম গার্বার উল্লেখ করেন, ট্রাম্প প্রশাসনের হার্ভার্ডের ২.২ বিলিয়ন ডলার ফেডারেল তহবিল ফ্রিজ করাসহ অর্থনৈতিক নানাবিধ বিমাতাসুলভ কর্মকাণ্ড প্রতিষ্ঠানটিকে চরম নাজুক পরিস্থিতির মুখে ঠেলে দেবে। প্রয়োজনীয় বরাদ্দ ব্যাহত হলে রোগী, শিক্ষার্থী, ফ্যাকাল্টি, স্টাফ এবং গবেষকবৃন্দের নির্ধারিত কর্মকাণ্ড মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। ফলে বিশ্বে আমেরিকার উচ্চশিক্ষার মান চরম বিপর্যস্ত হবে। আবার ৬৪% আমেরিকান কেনেডি সেন্টার ফর দ্য পারফর্মিং আর্টসসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ট্রাম্পের অযাচিত হস্তক্ষেপের ঘোর বিরোধিতা করছেন।

কর্মকাণ্ডের অনুমোদন তলানিতে : ২০২৪ সালের ভূমিধস বিজয়ের ১০০ দিনের মাথায় ৪৭তম প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কর্মকাণ্ডের অনুমোদনের হার বর্তমানে তলানিতে। সিএনএনের এসএসআরএস জরিপ প্রতিবেদন অনুসারে বিগত ৭০ বছরের মধ্যে নির্বাচিত প্রেসিডেন্টদের মধ্যে একমাত্র ডুয়েট আইজেনআওয়ারের পর ট্রাম্পের কর্মকাণ্ডের অনুমোদনের হার মার্চের তুলনায় ৬% হ্রাস পেয়ে এপ্রিলের শেষ পাদে ৪২% এ নেমে এসেছে। আর ডিসেম্বরে ৫৪% আমেরিকানের দৃঢ় আস্থা ছিল, ট্রাম্প চৌকস এবং গতিশীল নেতৃত্বে অধিকারী রাজনীতিবিদদের নিয়ে ক্যাবিনেট সাজিয়েছেন। বর্তমানে তা ৮% হ্রাস পেয়ে ৪৬% হয়েছে। ৫৭% উত্তরদাতার মতে, ট্রাম্পের অবিবেচনাপ্রসূত কর্মকাণ্ড যুক্তরাষ্ট্রকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। মাত্র ৪৩% উত্তরদাতা ট্রাম্পের কর্মকাণ্ড যুক্তরাষ্ট্রের জন্য প্রয়োজনীয় হিসেবে অভিমত ব্যক্ত করেছেন। রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধবিরতি প্রশ্নে ৬০% উত্তরদাতা ট্রাম্পের ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করেছেন; মাত্র ৩৯% উত্তরদাতা ট্রাম্পের ভূমিকার প্রশংসা করেছেন। দায়িত্ব গ্রহণের পূর্বে ৫৫% আমেরিকান পররাষ্ট্রনীতি পরিচালনায় ট্রাম্পকে সুদক্ষ এবং দূরদর্শী হিসেবে মতামত ব্যক্ত করলেও বর্তমানে মাত্র ৫০% তার দক্ষতার সপক্ষে সাফাই গেয়েছেন। অভিবাসন প্রশ্নে চলতি বছরের গোড়ার দিকের তুলনায় বর্তমানে ট্রাম্পের কর্মকাণ্ডের অনুমোদনের হার ৭% হ্রাস পেয়েছে। আবার অভিবাসন-ব্যবস্থা পরিচালনায় ডিসেম্বরে ৬০% আমেরিকান ট্রাম্পের প্রতি গভীর আস্থাশীল থাকলেও বর্তমানে তাতে চিড় ধরেছে এবং ৫৩% তার সামর্থ্যরে প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। ট্রাম্পের অভিবাসন কর্মকাণ্ডের প্রতি মার্চে ৫১% আমেরিকান সমর্থন জানালেও বর্তমানে মাত্র ৪৫% আমেরিকান তা সমর্থন করছেন। ভাইস প্রেসিডেন্ট ভ্যান্সের কর্মকাণ্ডের অনুমোদনের হার ৪১% এবং প্রত্যাখ্যানের হার ৫৮% বলে জনজরিপে জানা গেছে। ৪০% উত্তরদাতা ট্রাম্পের এবং ৩৪% উত্তরদাতা ভ্যান্সের কর্মকাণ্ডের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করলেও ৪৫% উত্তরদাতা এর তীব্র বিরোধিতা করেছেন। দলীয় পর্যায়ে রিপাবলিকানদের ৮৬% ট্রাম্পের সপক্ষে কথা বললেও ৯৩% ডেমোক্র্যাট ট্রাম্পের ঘোর বিরোধিতা করেছেন।

আইসিইউতে আমেরিকার অর্থনীতি : অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের বর্ণনায় বিশ্বের অন্যতম অপরাজেয় শক্তি চীন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ গোটা বিশ্বকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পণ্যসামগ্রীর ওপর ট্যারিফ বা আবগারি শুল্ক আরোপ করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আমেরিকার অর্থনীতির কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকেছেন। আর সিএনএনের সর্বশেষ জরিপ প্রতিবেদন অনুসারে, ৭১% আমেরিকানের দৃষ্টিতে ট্রাম্পের অবিবেচনাপ্রসূত কর্মকাণ্ডের দরুন আমেরিকার অর্থনীতি বর্তমানে আইসিইউতে রয়েছে। স্যালাইন, কোরামিন ও জোড়াতালি দিয়ে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়া হলেও নিকট ভবিষ্যতে আমেরিকার অর্থনীতিতে লালবাতি জ্বলার পুরোপুরি আশঙ্কা রয়েছে। ট্রাম্পের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা অনুমোদনের হার এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে মার্চের তুলনায় ৫% হ্রাস পেয়ে ৩৫% হয়েছে; মূল্যস্ফীতি অনুমোদনের হার ৯% হ্রাস পেয়ে ৩৫% হয়েছে এবং ট্যারিফ অনুমোদনের হার ৪% হ্রাস পেয়ে ৩৫% হয়েছে। সামগ্রিক বিচারে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় ট্রাম্পের পারঙ্গমতার প্রশ্নে অনুমোদনের হার ডিসেম্বরের তুলনায় ১৩% হ্রাস পেয়ে বর্তমানে ৫২% হয়েছে। তাই ট্রাম্পের হঠকারী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আমেরিকাজুড়ে বিদ্রোহ-বিক্ষোভের উত্তাল উর্মিমালা আছড়ে পড়ছে।

সাজঘরে পাঠানোর প্রক্রিয়ার সূত্রপাত : প্রথম দফা কার্যকালে প্রেসিডেন্ট ব্যক্তিগত স্বার্থে ও ইচ্ছায় ক্যাবিনেট সদস্যদের নিয়োগ দিতেন এবং পান থেকে চুন খসে পড়ার মতো কর্মকাণ্ডে তাদের সাজঘরে পাঠাতেন। এবারও দায়িত্ব গ্রহণের ১০১ দিনের মাথায় হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালতসকে সাজঘরে পাঠিয়েছেন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওকে সাময়িকভাবে তার স্থলাভিষিক্ত করেছেন। তাই সামগ্রিক পরিস্থিতি জানার জন্য শুধু অপেক্ষার পালা। 

হামসে বড় কোন হ্যায় : দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বাড়ি ভাড়া দৌরাত্ম্য, ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এজেন্সির সীমাহীন বাড়াবাড়ি, আইনশৃঙ্খলার অবনতিসহ নানা অনাসৃষ্টি ও মরণযন্ত্রণায় আমেরিকাজুড়ে বলতে গেলে ত্রাহি ত্রাহি রব উঠেছে। এমনতর বাস্তবতায়ও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সদম্ভে ও জোর গলায় নিজকে আমেরিকা তথা গোটা বিশ্বের সর্বময় অধীশ্বর দাবি করছেন। মক্কায়ও চোর আছে আর লঙ্কায়ও ভিখারি আছে-সেই স্মরণাতীতকাল থেকে চলে আসা জনশ্রুতি বা লোকপ্রবচন, অথচ ইন্দ্রিয়পরায়ণ রাবণের অবিবেচনাপ্রসূত কর্মকাণ্ডে সোনার লঙ্কা পুড়ে শ্মশানে পরিণত হয়েছিল। তাই বর্তমান পটভূমিতে অতি দর্পে হত লঙ্কা আশঙ্কা অমূলক হবে না।
লেখক : সহযোগী সম্পাদক, ঠিকানা, নিউইয়র্ক।
 

কমেন্ট বক্স