বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী প্রবাসী নাট্যকর্মীদের সম্মিলিত প্ল্যাটফর্ম থিয়েটার সাপোর্ট গ্রুপ আন্তর্জাতিক বাংলা নাটোৎসব করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে এবং প্রথম এই নাট্যোৎসবটি অনুষ্ঠিত হবে ২০২৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে। নাট্য উৎসবটির আয়োজক হিসেবে থাকবে সম্মিলিতভাবে নিউইয়র্ক-এর নাট্যদল ও নাট্যকর্মীবৃন্দ।
গত ৪ জানুয়ারি শনিবার সন্ধ্যা ৬ টায় নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের জুইস সেন্টারে এক আড়ম্বরপূন অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে আন্তর্জাতিক অভিবাসী নাট্যোৎসবের অফিসিয়াল লোগো অবমুক্তি। নাট্যোৎসবের শিরোনাম ‘অভিবাসের নাটক ২০২৬’। নাট্যেৎসবে যুক্ত নিউইয়র্কের নাট্যদলগুলো হলো- বাংলাদেশ থিয়েটার অব আমেরিকা (বিটিএ), ড্রামা সার্কল নিউইয়র্ক, ঢাকা ড্রামা, থিয়েটার থিয়েটার, ক্রিস্টি, বাংলা থিয়েটার নিউইয়র্ক, শিল্পাঙ্গন, থিয়েটার ৭১, এপিক এ্যাক্টরস ওয়ার্কশপ, নাগরিক নাট্যাঙ্গন অনাসাম্বল, ব্ল্যাক ফেল্ম। উৎসব আয়োজন সফল করার জন্য বাংলাদেশ থিয়েটার অব আমেরিকার মোহাম্মদ কবিরকে আহবায়ক এবং ড্রামা সার্কল নিউইয়র্ক-এর আবীর আলমগীরকে সচিব করে ১২ সদস্যের উৎসব নির্বাহী টিম এবং ২৬ সদস্যের উৎসব বাস্তবায়ন টিম গঠন করা হয়েছে। সমবেত কণ্ঠে আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে গানের মধ্যদিয়ে শুরু হয় লোগো অবমুক্ত অনুষ্ঠান। সংগীত পরিবেশন করেন তাহমিনা মোস্তাফা, কান্তা আলমগীর, সিফাত পলক, মিতালী দাশ। তবলায় ছিলেন ফিলিপ লিটল। এরপর ২০২৪ সালে প্রয়াত দুই বাংলার নাট্যজনসহ প্রয়াত সকল নাট্যজনদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। ডা. ফারুক আজম লিখিত শোক প্রস্তাব পাঠ করেন এবং শ্রদ্ধাজ্ঞাপন প্রক্রিয়াটি সঞ্চালনা করেন সৈয়দ জাকির আহমেদ রনি ও এজাজ আলম।
এরপর অভিনেতা ও নির্দেশক শামসুল আলম বকুল থিয়েটার সাপোর্ট গ্রুপ গঠনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে উপস্থিত সবাইকে অবগত করেন। তিনি বলেন, বর্তমানে এই গ্রুপে ৭টি দেশের মোট ৩২ টি নাট্যদল এবং ১৩১ জন নাট্যকর্মী যুক্ত রয়েছে।এই ভার্চুয়াল গ্রুপ থেকে ২০২২ সালে ২৭ মার্চে একটি নাটকের পোষ্টার প্রদর্শনী করা হয়।এই প্রদর্শনীতে ১০ দেশ থেকে মোট ১৭৫টি পোস্টার প্রদর্শন করা হয়। তিনি বলেন, এবার তারা উদ্যোগ নিয়েছেন আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসব করার।
‘অভিবাসের নাটক ২০২৬’ এর আহবায়ক মোহম্মদ কবীর আনুষ্ঠানিকভাবে এই নাট্যোৎসবের ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। তিনি বলেন, আয়োজকদের পক্ষে এ অনুষ্ঠান সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য এ যাবৎ দুটি টিম গঠন করা হয়েছে। একটি হলো উৎসব নির্বাহী টিম, অন্যটি উৎসব বাস্তবায়ন টিম। তিনি উৎসব নির্বাহী টিমের ১২ সদস্যকে পরিচয় করিয়ে দেন। নির্বাহী টিমের সদস্যরা হলেন- আহবায়ক মোহম্মদ কবীর, সচিব আবীর আলমগীর, অর্থ বাবস্থাপনা শামীম মামুন লিটন, আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ও সমন্বয়ক শামসুল আলম বকুল, সদস্য জহির মাহমুদ, রোকেয়া রফিক বেবী, ডা. ফারুক আজম, সারওয়ার হারুন, মিথুন আহমেদ, সৈয়দ জাকির আহমেদ রনি ও এজাজ আলম। উৎসব সচিব আবীর আলমগীর উৎসবের একটি খসড়া পরিকল্পনা তুলে ধরেন সবার সামনে। তিনি বলেন, ২০২৬ এর অক্টোবরের ৯ থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত এই উৎসব উদযাপন করা হবে। উৎসবে ইউএসএ ছাড়াও আরও ৫টি দেশ থেকে মোট ১৬ দল অংশ নেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে- ইউএসএ, কানাডা, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, সৌদি আরব ও জাপান। উৎসবে বিভিন্ন দলের নাট্য প্রদর্শনীর পাশাপাশি কাউন্সিল অধিবেশন, সেমিনার, র্যালি, সাংস্কৃতিক মেলা, নাট্য কর্মশালাসহ নানান কর্মকাণ্ড অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এরপর তিনি উৎসব বাস্তবায়ন টিমের সকলকে পরিচয় করিয়ে দেন।
উৎসব বাস্তবায়ন টিমের সদস্যরা হলেন- আলমগীর চঞ্চল, আহ্সান উল্লাহ, আনিকা মাহীন, আনোয়ার সেলিম, বাবর খাদেমী, বসুনিয়া সুমন, চন্দন চৌধুরী, জেফ হোসেন, কান্তা আলমগীর, লায়লা ফারজানা, মিল্টন আহমেদ, নজরুল ইসলাম, প্রতিমা সুমি, রিপা আহমেদ, রিপন শওকত রহমান, স্বাধীন মজুমদার, শারমীন রেজা ইভা, শিরীন বকুল, শফিউল আলম, সপ্না কাউসার, সুলতানা খান, শোখ তানভির আহমেদ. সুলতান বোখারী, তাহমিনা মোস্তাফা, জিয়াউল হাসান ও শুক্লা রায়।
এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে উৎসব লোগো অবমুক্ত করা হয়। লোগোর অঙ্কন শিল্পী, নাট্যকর্মী ও নির্দেশক মিথুন আহমেদ আনুষ্ঠানিকভাবে এই লোগোটি উৎসব আহবায়ক মোহম্মদ কবীর ও সচিব আবীর আলমগীর এর হাতে তুলে দেন। এরপর মঞ্চে বিশাল আকারের দুটি লোগো অভ্যাগত অতিথিদের সামনে আনুষ্ঠানিকভাবে অবমুক্ত করা হয়। একই সময়ে সকল দর্শকদের গলায় উৎসব লোগো ও থিয়েটার সাপোর্ট গ্রুপের লোগো সম্বলিত ব্যাজ পরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর মিথুন আহমেদ উৎসব লোগো নির্মাণে তার যে ছায়া ভাবনাটি কাজ করেছে, তার প্রেক্ষাপট এবং অভিবাসের নাটক নামকরণের ব্যাখ্যাটি সকলের উদ্দেশ্যে উপস্থাপন করেন। অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে ‘নুরুলদীনের সারাজীবন’ নাটক থেকে অংশবিশেষ অভিনয় করেন বসুনিয়া সুমন।