খুব ছোটবেলার কথা। ছোট ভাই আর আমি দুজনে মিলে খেলনা ফোনের আবিষ্কার করি। খুঁজে নিলাম দেশলাইয়ের বক্স আর দূরত্ব তার। সে কী আনন্দ!
ছোট ভাই কানে লাগিয়ে বলা শুরু করে,
-শুনতে পাচ্ছ?
-শুনতে পাচ্ছি। তুমি শুনতে পাচ্ছ?
পাচ্ছি তো। দুজনের সেকি কৃতিত্ব। যেন অষ্টম আশ্চর্য!
বাবা সরকারি অফিসার। সেই সুবাদে একসময় বাসায় ফোন কানেকশন এল। এবার আরেক প্রতিযোগিতার খেলা। ফোনের ক্রিং ক্রিং শব্দ এলে কে আগে ফোন রিসিভ করতে পারবে।
ছোট ভাই না আমি?
যে আগে ফোন রিসিভ করবে, সে জয়ী হবে। আর যে জয়ী হবে না, সে ছোটখাটো একটি চানাচুর পার্টি দেবে। ছোট মামা আমার বয়সী। সে নিজেকে নিজেই জজ হিসেবে নিয়োগ দিল। মামা নির্ধারিত করবে কে জয়ী হবে।
একপর্যায়ে দেখলাম, আমি সংখ্যালঘুর কারণে ছোট মামা আমাকে হারিয়ে দিচ্ছে। মন খারাপ হলো। খেলব না ঘোষণা দিলাম। খেলা ও চানাচুর পার্টি দুটিরই যবনিকা টানা হলো।
দিনরাত মাকে একটি প্রশ্ন করতাম-কেন আমরা সেই মানুষটির ছবি ও নম্বর জানি না। যিনি ফোন করেন? মা আমাকে এড়িয়ে যেতেন। উত্তর জানা নেই-আমি হলাম উপেক্ষিত।
একই প্রশ্ন মায়ের বান্ধবীদের করতাম-আচ্ছা খালা, কে ফোন করল? নম্বর ও ছবিটা আসে না কেন? সবাই আমাকে পাশ কাটিয়ে যেতেন। আমার কচিমনের ছোট প্রশ্নের উত্তর কারোরই জানা ছিল না।
তবু আমার বিস্ময়ের শেষ নেই। আমিই আবিষ্কার করব। আমিই বের করতে পারব-যিনি ফোন করেন তার নাম ও ছবি ইত্যাদি।
মেঘে মেঘে অনেক বেলা। মায়ের কাছে প্রশ্ন করা সেই উত্তরটি পেতে আরও অনেক সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে। আরও যাদের কাছে এই প্রশ্ন ছিল-এই ধরায় তারা কেউ নেই।
মা চলে গেছেন না ফেরার দেশে। এখন আমি কাজ থেকে ব্রেকের সময় মেয়েকে ফোন করি-মেয়ে সেভ করে রেখেছে MUMMA 347......। আমাকে চমক লাগিয়ে সে ভিডিও কল দেয়। আমি আনন্দিত হই।
আমিও মেয়ে আর তার বাবাকে না জানিয়ে সেভ করি MUMMA-011——G। কিন্তু মায়ের নম্বরটি হারিয়ে ফেলেছি। যদি কখনো খুঁজে পাই, নম্বরটি টুকে রাখব। মেয়েকে চমকে দিয়ে আমি ভিডিও কল করব। আমি অপেক্ষায় আছি!
আর যদি কখনো মা ফোন করেন, আমি নিশ্চিত কণ্ঠস্বর চিনতে পারব। সেভ করব MUMMA-011... মেয়েকে তাক লাগিয়ে দেব। সব প্রমাণ দেখাব। এবারও নিশ্চয় আমি জয়ী হব। পঁচিশ বছর কাটল। আমি অপেক্ষায় আছি!!!